শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নিরাপত্তা আইনে ওসি মোয়াজ্জেমের ‘দোষ’ প্রমাণিত

ভোরের সংলাপ ডট কম :
মে ২৬, ২০১৯
news-image

রোববার সাইবার আদালতে এ সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন পিবিআই সদর দফতরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা।

রিমা সুলতানা বলেন, গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ব্যারিস্টার সুমনের মামলাটি প্রথমে অভিযোগ আকারে ছিল। পরে পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয় আদালত।

ওসির বিরুদ্ধে থানায় নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়াসহ প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্তে প্রমাণিত সব তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন আদালতকে দেয়া হয়েছে।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী রাফিকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এ অভিযোগে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে রাফি ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছেন রাফি। সেই কান্নার ভিডিও করেন থানার ওসি। রাফি তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবার ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখন তোমাকে কাঁদতে হবে।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়ম ভেঙে রাফিকে জেরা ও তা ভিডিও করেন। পরে ভিডিওটি ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেম অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর প্রশ্ন করছেন রাফিকে। রাফির গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নও করেন ওসি।

এর আগে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার স্পর্শকাতর মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইয়ে স্থানান্তর হয়।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যান ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে চার-পাঁচজন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফি মারা যান।

পরিকল্পিতভাবে রাফিকে পুড়িয়ে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এ পর্যন্ত ২১ জন কারাগারে রয়েছেন। হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন মূল আসামিরা। যেখানে ওঠে আসে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার নির্দেশনায় হত্যাকাণ্ডের পেছনে সংশ্লিষ্টদের নাম। এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া ও মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন