শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বন্ধ হচ্ছে কারাগার থেকে ‘গ্যাং’ নিয়ন্ত্রণ

ভোরের সংলাপ ডট কম :
আগস্ট ৪, ২০১৭
news-image

কারাগারে বন্দি অবস্থায়ও মুক্তজীবনের মতোই সময় কাটায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনরা। যখন যা ইচ্ছে, তাই করছে তারা। কারাগারে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, মাদক দ্রব্যের ব্যবসা, ব্যবসায়ীদের হুমকি এবং চাঁদাবাজীসহ পুরো গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়; চাঁদার অর্থও সময় মতো তাদের কাছে কারাগারেই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

চাঁদাবাজী থেকে প্রাপ্ত অর্থের সিংহভাগ কারাগারে খরচ করে রাজার হালে দিন কাটে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনদের। তাদের এমন ভোগের সামাজ্র সম্প্রতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন কারা সংশ্লিষ্টরা। আগামীতে কারাগার থেকে গ্যাং নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বন্ধ হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।

আগে বিভিন্ন দালাল চক্রের মাধ্যমে কারাগারে নানা ধরনের মাদক প্রবেশ করতো। কারাবন্দিদের স্বজনেরাও এর সঙ্গে জড়িত ছিল। বর্তমানে আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জামকে ফাঁকি দিয়ে মাদক সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কারাগারে মোবাইল ফোন বাণিজ্য, মাদকের প্রবেশ ঠেকানো ও গ্যাং নিয়ন্ত্রণসহ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেনা হয়েছে আধুনিক সব সরঞ্জাম। ‘কারাগারের নিরাপত্তা আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আওতায় স্ক্যানার, সিসি ক্যামেরা, অত্যাধুনিক আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর, ওয়াকিটকি, টিনয় সিস্টেম, সিকিউরিটি সাইরেন সিস্টেম ও কম্পিউটার বসানো হয়েছে। সেগুলোর সাহায্যে কারাগারের নিরাপত্তার পাশাপাশি সব ধরনের অবৈধ কাজ বন্ধ করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া দেশে কারাগারের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রথমবারের মতো কারাগারের জন্য কেনা হচ্ছে মোবাইল ফোন জ্যামার ও বডি স্ক্যানার। এই সরঞ্জামগুলো পরিচালনার জন্য কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

কারা সদর দপ্তর সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কারাগারের জন্য এসব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। ল্যাগেজ স্ক্যানার ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ভিতরে থেকে কেউ যেন বাইরে যোগাযোগ করতে না পারে- সে জন্য মোবাইল ফোন জ্যামারের মাধ্যমে কারাগার ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।

প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি এবং নতুন করে মোবাইল ফোন জ্যামার আমদানি করায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৪৯ কোটি টাকা হয়েছে। চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পটির আওতায় ১৪ ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সরঞ্জামাদির মধ্যে বডি স্ক্যানার ও লাগেজ স্ক্যানারগুলো জার্মানি থেকে এবং লাগেজ স্ক্যানারগুলো ইতালি থেকে কেনা হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সিসিটিভি ১৪৪টি; ক্যামেরা ২ হাজার ৩০৪টি; মনিটর ১৪৪টি; আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর ৬৭টি; হ্যান্ডহোল্ড মেটাল ডিটেক্টর ১৫৪টি; মোবাইল ফোন জ্যামার ৪০০টি; ল্যাগেজ স্ক্যানার ৮টি; পার্সোন স্ক্যানার ৮টি; ট্যানয় সিস্টেম অ্যামপ্লিফায়ার ৩০টি; ট্যানয় সিস্টেম স্পিকার ১ হাজার ৩২০টি; ওয়াকিটকি ৭৭০টি; সিকিউরিটি সাইরেন সিস্টেম ৬৫টি; ডিজিটাল ক্যামেরা ৭৯টি; ডেস্কটপ ৮৮টি; ‌ইউপিএস ৮৮টি; ল্যাপটপ ৭৫টি; সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষের জন্য এসি ৬৫টি এবং সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ ৬৫টি।

কারা সদর দপ্তর সূত্র বলছে, শরীরে অবৈধ কিছু লুকানো থাকলে- তা সহজেই শনাক্ত করবে আধুনিক আর্চওয়েগুলো। বডি স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় শরীরের কোথায় কী আছে- সব দেখা যাবে। তবে, সবাইকে বডি স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। শুধুমাত্র সন্দেহভাজনদের বডি স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে নেওয়া হবে।

কারা সদর দপ্তরের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘কারাগারের নিরাপত্তা আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে কারা অধিদপ্তরে ২টি ওয়েব বেজড ভ্যান সংযোজন; অধিদপ্তর ও কাশিমপুর কারাগারের মধ্যে ভিডিও লিংকেজ চালু; কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য স্মার্ট আইডি কার্ড; ই-টেন্ডার চালু; নিজস্ব ওয়েব সাইট ও আইটি সেল চালু এবং অনলাই বাজেট এন্ট্রির কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি আরও জানান, র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সহযোগিতায় বন্দিদের ডাটা এন্ট্রির কাজ; বন্দিদের মোবাইল ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ; ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার পরিচালনার কাজ চলছে।

বজলুর রশিদ বলেন, এসএমএসের মাধ্যমে বন্দিদের সঙ্গে সময় গ্রহণের জন্য কারাগারে ‘মোবাইল অ্যাপস’ চালু করা হয়েছে। কারা কর্মচারীদের জন্য কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কারাগারে অবৈধ ও অপরাধমূলক ঠেকাতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২টি বিভাগ এবং পরবর্তীতে সারাদেশের কারাগারগুলোকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, কারাগারকে শতভাগ নিরাপদ রাখতে ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগের তুলনায় এখন সারাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো। এই প্রকল্প বাস্তায়ন হলে কারাগারে আর কোনো ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠিত হবে না।

প্রকল্পের কাজ যথা সময়ের মধ্যে শেষ করার প্রসঙ্গে ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রকল্পের খরচ ৩২ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কাজের পরিধি বাড়ায় এর ব্যয় এবং সময় বেড়েছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রকল্প শেষ হতে আরও ৬ মাস বেশি সময় লাগবে।

bhorersanglap