শুক্রবার, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

লেখাপড়ায় বাধা দেয়ায় স্বামীকে তালাক

ভোরের সংলাপ ডট কম :
জুন ১৭, ২০১৭
news-image

নির্দিষ্ট কিছু শর্ত ছাড়া মুসলিম আইনে স্ত্রীর তালাক দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। কিন্তু এবার পড়াশোনা করতে না দেওয়ায় স্বামীকেই তিন তালাক দিলো এক মুসলিম কিশোরী। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুরে।
কিশোরীর এই সাহসী পদক্ষেপে শোরগোল পড়ে গেছে সর্বত্র। অনেকে মাম্পি খাতুন নামে ওই কিশোরীকে নোবেলজয়ী পাক-কন্যা মালালা ইউসুফজাইয়ের সঙ্গেও তুলনা করছেন।

কেউ কেউ অবশ্য তার পদক্ষেপের সমালোচনাও করছেন। তাদের মতে, মুসলিম সমাজে তিন তালাক দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র পুরুষদেরই। তবে লোকে কী বলল, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ ওই কিশোরী।
তার সাফ কথা, ‘মালালা ইউসুফজাইয়ের মতো আমাকেও নিজের পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে। আমাদের প্রত্যেককেই নিজের লড়াইটা নিজেকে লড়তে হবে।’
প্রসঙ্গত, তালেবানি ফতোয়া উপেক্ষা করে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা মালালা ইউসুফজাই। এই অপরাধেই তালেবানদের হামলার মুখে পড়তে হয় তাকে। গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়েছিল মাথা। কোনো মতে প্রাণে বেঁচে যায় মালালা। এখন ইংল্যান্ডে থেকে পড়াশোনা করছে সে। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ মহিলা হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারও জিতেছে মালালা ইউসুফজাই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মল্লিকপুরের মন্দিরবাজার এলাকায় একটি চায়ের দোকান চালান সারজুল ঘরামি। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে অভাবের সংসার। ২০১৫ সালে এক প্রকার জোর করে মেয়ে মাম্পি খাতুনের বিয়ে দেন তিনি। তখন নবম শ্রেণিতে পড়ত মাম্পি। পড়াশোনা করার ইচ্ছা থাকলেও, পরিবারের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয় সে। যদিও বিয়ের আগে স্বামী ও তার বাড়ির লোকের কাছে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিল যে, বিয়ের পরও তাকে পড়ার অনুমতি দিতে হবে।
কিন্তু বিয়ের পরই ছবিটা পাল্টে যায়। মাম্পির স্কুলে যাওয়া নিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করেন তার শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা। শুরু হয় ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। এরই মধ্যে চলতি বছর মাধ্যমিক পাস করে মাম্পি। কিন্তু, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা বললে আপত্তি জানায় মাম্পির স্বামী। এর কিছু দিনের মধ্যে বাপের বাড়ি চলে যায় মাম্পি।
বাড়ির লোককে জানিয়ে দেয়, সে আর শ্বশুড়বাড়িতে ফিরবে না। বাপের বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করবে। গত মাসে স্থানীয় একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় মাম্পি।
এই খবর পাওয়ার পরই মাম্পির বাপের বাড়িতে গিয়ে তুমুল অশান্তি করেন শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা। মাম্পিকে শ্বশুড়বাড়ি ফিরে যেতে জোরাজুরি করা হয়। এরপরই সবার সামনে স্বামীকে তিন তালাক দেয় মাম্পি। তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে মাম্পির বাড়ির লোকেরাও।
মাম্পির মা এখন বলছেন, ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেয়ের বিয়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম আমরা। আমাদের কাছে থেকে ও যতদূর খুশি পড়াশোনা করতে পারে, করুক।’
তবে মাম্পির এই সিদ্ধান্তকে সকলেই যে ভালোভাবে নিয়েছেন, এমনটা নয়। স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল মান্নান বলেন, একমাত্র পুরুষদের তিন তালাক দেওয়ার অধিকার আছে। মহিলাদের তিন তালাক দেওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও মাম্পির পাশেই দাঁড়িয়েছে স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাজি কাজি জালালউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই বিবাহ বিচ্ছেদ চাওয়ার সমান অধিকার আছে।’
সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার বলেন, যারা এখনও মনে করে, মেয়ের কাছে বিয়েটাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, এই ঘটনা তাদের চোখ খুলে দেবে।
jamunanews24

bhorersanglap