কানাডা ভ্রমণে সেরা ১০ শহর
উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে থাকা দেশ কানাডা। আয়তনে দিক থেকে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। তবে জনসংখ্যায় এর অবস্থান ৩৮তম। দেশটির বিভিন্ন শহরে প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন। আজ কানাডা ভ্রমণে পর্যটক প্রিয় সেরা ১০টি শহর সম্পর্কে জানাবো:
১. ভ্যানকুভার:
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে তথা কানাডার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত একটি শহর ‘ভ্যানকুভার’। এটি জর্জিয়া প্রণালীর তীরে, কোস্ট পর্বতমালার পাদদেশে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার সীমান্ত থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ১৯৮৬ সালের বিশ্বমেলার পর থেকে পর্যটকদের জন্য শহরটি আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। নিউইয়র্ক ও লসঅ্যাঞ্জেলেসের পরেই ভ্যানকুভার উত্তর আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্পশহর। ভ্যানকুভারকে ‘উত্তরের হলিউড’ নামেও ডাকা হয়। ভ্যানকুভার শহরটি ব্রিটিশ নাবিক ও ক্যাপ্টেন জর্জ ভ্যানকুভারের নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ভ্যানকুভারে কানাডার সর্ববৃহৎ বন্দরটি অবস্থিত।
২. হুইসলার:
কানাডার সমুদ্র পার্শবর্তী একটি শহর ‘হুইসলার’। এটি ‘হুয়াই ৯৯’ নামেও পরিচিত। কানাডায় দর্শনার্থী প্রিয় শহরগুলোর মধ্যে এর অবস্থান দ্বিতীয়। এখানে ভ্রমণপিঁপাসুদের জন্য রয়েছে বরফময় পাহাড়, স্নোবর্ডিং, কল্পকাহিনী যুক্ত গ্রাম, বিখ্যাত সব রিসোর্ট। যা পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, কিংবা ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে বেড়াতে এলে অন্যরকম মুহূর্ত তৈরি হয়। গ্রীষ্মের ছুটিতে অসংখ্য মানুষ এখানে বেড়াতে যান। যেসব দর্শনার্থীরা শীতকালীন আবহাওয়া ভালোবাসেন তাঁরা কখনো এটা মিস করতে চাইবেন না।
৩. ভিক্টোরিয়া:
কানাডার আরেকটি দর্শনার্থী প্রিয় শহর ‘ভিক্টোরিয়া’। এটি ‘গার্ডেন সিটি’ নামেও পরিচিত। শহরটি পূর্বের বহু ইতিহাসের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ। ব্রিট্রিশ কলম্বিয়ার সংসদভবন এখানে আসা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। তাছাড়া এখানে রয়েছে বাটচার্ট গার্ডেন ও গোল্ডস্ট্রিম প্রোভিনশিয়াল পার্ক। শীতকালে এখানকার সমুদ্র সৈকতও দর্শনার্থীদের সমাগমে জমজমাট হয়ে ওঠে।
৪. টোফিনো:
কানাডার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি জেলা ‘টোফিনো’। গ্রীষ্মকালে এটি দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যারা মাছ ধরতে পছন্দ করে, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পছন্দ করে, ক্যাম্প করে সারারাত মজা করতে ভালোবাসে, সব মিলিয়ে যারা প্রকৃতি পছন্দ করে তাদের জন্য স্থানটি জনপ্রিয়। এছাড়াও এখানে সমুদ্র সৈকত ও বিভিন্ন পার্ক রয়েছে। যা দর্শনার্থীদের বারবার এখানে নিয়ে আসে।
৫. কুইবেক:
ফরাসি কানাডিয়ান সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হলো ‘কুইবেক’ শহর। শহরটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে পুরানো বসতিগুলোর মধ্যে একটি এবং কানাডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছর এখানে হাজার হাজার দর্শনার্থী ঘুরতে আসে। এখানে রয়েছে পুরানো কুইবাক অধিবাসীদের কবরস্থান, ১৭ শতকের ঘর-বাড়ি, গীর্জা, ক্যাফে, বিস্ট্রোস, ম্যানিকিউরেটেড স্কোয়ার এবং চটিউ ফ্রন্টেন্যাকের মতো ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান। তাছাড়া এটি ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
৬. মন্ট্রিয়ল:
কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও কুইবেক প্রদেশের বৃহত্তম শহর ‘মন্ট্রিয়ল’। এটির মূল নাম ভিলা মারি বা মেরির শহর। শহরটির বর্তমান নামটি এসেছে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পর্বতচূড়া মন্ট-রয়্যাল থেকে, যা শহরের কাছে অবস্থিত আইল্যান্ড অফ মন্ট্রিয়ল থেকে দেওয়া হয়েছে। শহরটি খাবার, গ্যালারি, জাদুঘর এবং বিস্ময়কর সব স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। এই শহরে পাসপোর্ট না থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না। সব মিলিয়ে শহরটি কানাডায় ঘুরতে আসা মানুষের কাছে জনপ্রিয়।
৭. অটোয়া:
কানাডার রাজধানী ‘অটোয়া’। জনসংখ্যার বিচারে অটোয়া দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম নগরী। শহরটি পাবলিক পার্ক, জাদুঘর ও ভিক্টোরিয়ান যুগের স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। শহরটির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে পার্লামেন্ট হিল, যেখানে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল গ্যালারী অবস্থিত। তাছাড়া এখানকার বরফশীতল আবহাওয়া ও গ্রীষ্মকালে নৌকায় করে ট্রি-লাইন রাউডাউ খালে ঘুরে বেড়ানো দর্শনার্থীদের কাছে ভীষণ প্রিয়।
৮. ব্যানফ:
কানাডার একটি ক্ষুদ্র রিসোর্ট শহর ‘ব্যানফ’। এখানে রয়েছে মনোরম পরিবেশের সব রিসোর্ট, জাদুঘর, ন্যাশনাল পার্ক ও বরফময় পাহাড়। তাছাড়া এখানকার রিসোর্টগুলোতে এমন নিখুতভাবে খাবার পরিবেশন করা হয়, যা আপনাকে বিলাসিতার অন্যরকম স্বাদ দেবে। খরচ একটু বেশি হলেও স্থানটি দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রিয়।
৯. লেক লুইস:
ব্যানফ শহর থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের দুরত্বে ‘লেক লুইস’ অবস্থিত। এটি তাঁর হিমবাহ, স্বচ্ছ পানির লেক ও অসাধারণ পর্বতমালার জন্য বিখ্যাত। ভ্রমণকারীরা শীতকালে এখানে স্কিইং, স্নোবোর্ডিং ও আইস স্কেটিং এবং গ্রীষ্মকালে মাছ ধরার জন্য আসেন।
১০. টরন্টো:
কানাডার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত অন্টারিও প্রদেশের রাজধানী শহর ‘টরন্টো’। অর্থনৈতিকভাবে কানাডার সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশ অন্টারিও-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর বলে এটি দেশটির আর্থিক ও ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র। টরন্টো শহরটি অন্টারিও হ্রদের উত্তর-পশ্চিম তীরে অবস্থিত। নগরকেন্দ্রেই সেন্ট জেমস অ্যাংলিকান ক্যাথিড্রাল এবং সেন্ট মাইকেল রোমান ক্যাথলিক ক্যাথিড্রাল দুইটি ধর্মীয় স্থাপনা উল্লেখ করার মতো। শহরটি চলচ্চিত্র নির্মাণ, টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান প্রযোজনা এবং সংবাদ সম্প্রচারের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যম টরন্টো শহরেই অবস্থান নিয়েছে। টরন্টোতে থাকা বহু জাদুঘর, নাট্যশালা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সেবাগুলো পর্যটকদের কাছে শহরটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। শহরকেন্দ্রের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আর্ট গ্যালারি অফ অন্টারিও, রয়াল অন্টারিও মিউজিয়াম, হকি হল অফ ফেম এবং দ্য বেল লাইটবক্স, যেখানে টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান কার্যালয়টি অবস্থিত। টরন্টো শহরে সবুজ উদ্যানেরও অভাব নেই; কুইন্স পার্ক ছাড়াও এখানে আছে ৪০০ একর আয়তনবিশিষ্ট হাই পার্ক, যার ভেতরে হাঁটার পথ, খেলাধুলার জায়গা এবং একটি চিড়িয়াখানাও আছে।