রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ
সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছে সাংবাদিকদের শীর্ষ ছয়টি সংগঠনের ১১ নেতা। এ প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষে বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল এ কর্মসুচী ঘোষণা করেন।সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের শীর্ষ ছয়টি সংগঠনের নেতারা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের অপর অংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, অন্য অংশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, বিএনপি সমর্থিত মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিআরইউর সভাপতি মুরসালিন নোমানী, ডিইউজের একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সারাদেশের সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নাম ও প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে ঢালাওভাবে তাদের ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় সারাদেশের সাংবাদিকদের মনে গভীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।‘দেশের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব এভাবে তলব করা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কেননা এর আগে কোনো দিন কোনো সময়ে এরকম ঘটনা ঘটেনি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাওভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ উদ্দেশ্যমূলক বলে আমরা মনে করি। নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সব সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতা পেশাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।’
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কেন, কি কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এতে সারাদেশের সাংবাদিকদের মনে নানা ধরনের আশঙ্কারও সৃষ্টি করেছে। অনেকে বিএফআইইউর এই পদক্ষেপকে সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল বলেও মনে করছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়টি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে। এতে দেশের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হচ্ছে। কারণ গোটা বিশ্বে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশের সরকার ও সচেতন সমাজ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি কিংবা কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগের কৌশল মেনে নেয় না, নিতে পারে না। তাই সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এরই মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছে। আমরা তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।বিএফআইইউ সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে তথ্য পাওয়ার আগেই তথ্য চাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য কী? সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ফআইইউর দেওয়া চিঠি গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় সমাজের মানুষের কাছে সাংবাদিক নেতা তথা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছে এ ঘটনার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও প্রতিকার দাবি করছি। কেননা এতে করে সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালানো হয়েছে। যা কারো কাম্য নয় বলা হয় লিখিত বক্তব্যে।
আমরা আপনাদের ভোটে নির্বাচিত। তাই আপনাদের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সে কারণেই বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনাদের কাছে এবং আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করি। সে বিবেচনায় আমরা দৃঢ়তার সাথে বলছি, আমাদের নেতাদের ব্যাংক হিসাবে যদি কোনো অস্বাভাবিক লেন-দেন কিংবা কোনো ধরনের মানি লন্ডারিং কিংবা জঙ্গি অর্থায়নের তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়, তা যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আর যদি তা না হয়, তবে সেটাও যেন যথাযথ গুরুত্বের সাথে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়।
অতীতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লড়াই-সংগ্রাম, নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংকটে আপনারা আমাদের পাশে থেকেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতেও আমরা আপনাদের পাশে চাই। সাংবাদিকদের সুরক্ষা, স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে কোনো ধরনের হুমকি ধামকিতে আমরা অতীতে যেমন পিছপা হইনি, ভবিষ্যতেও হবো না। আগামী দিনে যে সব কর্মসূচি দেওয়া হবে তা সফল করার লড়াইয়ে আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন এবং আপনাদের মাধ্যমে সারাদেশের সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সজাগ থাকার আহবান জানানো হয়েছে।