রাজার দ্বীপের রাজধানী ‘মালে’, যে তথ্যগুলো না জানলেই নয়
![news-image](https://bhorersanglap.com/wp-content/uploads/2020/04/Maldivesmain.jpg)
মালদ্বীপের রাজধানী মালে। ঐতিহ্যগতভাবে স্থানীয়রা এই শহরকে ‘রাজার দ্বীপ’ বলে ডাকে। এটি কেবল রাজধানীই নয়, দেশটির নির্বাহী, আইনসভা আর বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবস্থানে এই শহরেই। ছোট্ট এই দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র। সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ অংশ, ব্যাংক আর ব্যবসা পরিচালিত হয় মালেকে কেন্দ্র করে। আবার এই শহরটি কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের একটি। এখানকার হালহুমেলকে কৃত্রিম দ্বীপ হিসাবে দাবি করা হয়। এখানে জেনে নিন মালে সম্পর্কে কিছু তথ্য, যা আপনাকে শহরটি সম্পর্কে সার্বিক ধারণা দেবে। ভ্রমণে গেলে এসব তথ্য না জানলেই নয়।
প্রবেশ ও থাকার ব্যবস্থা
মালদ্বীপের এই শশব্যস্ত রাজধানীতে ফেরিতে চড়েই চলে যেতে পারবেন। এয়ারপোর্ট আইল্যান্ড হালহালে এবং মালে শহরের মধ্যে ঘড়ি ধরে ফেরি চলাচল করে।
থাকার জন্য বিলাসী হোটেল রয়েছে। কম বাজেটেও মিলবে। আরো আছে কিছু দারুণ গেস্ট হাউজ। এই ফেরি কিংবা দ্রুতগতির লঞ্চের মাধ্যমে প্রতিবেশী হালহুমালে আর ভিলিংইলি দ্বীপেও পৌঁছানো যাবে।
আকর্ষণীয় স্থান
এখানে দেখার বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন স্থান রয়েছে। কয়েটি চিনে নিন।
১. রিপাবলিক স্কয়ার : একবার মালে পৌঁছলে আপনাকে স্বাগত জানাবে রিপাবলিক স্কয়ারের এক দানবাকৃতির পতাকা। ওটা মালদ্বীপের জাতীয় রংগুলোকে গর্বের সঙ্গে প্রদর্শন করে যাচ্ছে। এই স্কয়ারে রয়েছে একটি ছোট পার্ক। স্থানীয় ও পর্যটকদের ব্যাপক আনাগোনা এখানে। মালের উত্তর উপকূল থেকে বেশ কাছেই রিপাবলিক স্কয়ার। এর পাশেই রয়েছে দেশটির ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স এবং পুলিশ সার্ভিসের সদরদপ্তর। এখানে ইসলামিক সেন্টারও রয়েছে।
২. ইসলামিক সেন্টার :
১৯৮৪ সালে ইসলামিক সেন্টার খোলা হয়। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হয়ে ওঠে এটি। ঐতিহ্য আর ইসলাম নিয়ে স্থানীয়দের ধ্যান-ধারণার মিশেল ঘটেছে এর অনবদ্য স্থাপত্যকলায়। এর অসাধারণ জাঁকালো সোনালী গম্বুজগুলো মালের আকাশছোঁয়া স্থাপনার নিশানা বহন করে। মসজিদের অভ্যন্তরের নকশায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন কাঠের কারুকাজ ও ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি। মালদ্বীপের সবচেয়ে বড় মসজিদটির অবস্থান এই সেন্টারেই। এর নামকরণ করা হয়েছে জাতীয় বীর সুলতান মুহাম্মাদ থাকুরুফানু আল অজামের নামে।
৩. ফ্রাইডে মস্ক : মালদ্বীপের নিজস্ব ঘরাণার হস্তশিল্পের এক জ্বলন্ত উদাহরণ যেন এই মসজিদটি। এটি বানানো হয়েছিল ১৬৫৮ সালে। সেই সময় মূল ভবনটা বানানো হয়েছিল কোরাল পাথর দিয়ে। এসব পাথরে কারুকার্যের দেখা মেলে। ঐতিহাসিক এই ভবনটি দেশের সেই পুরনো সময়ের কাঠের শিল্প আর বার্নিশের চাকচিক্যের তথ্য দেয়। এটার মিনার এক সময় সর্বোচ্চ মিনার হিসাবে পরিচিত ছিল। এর আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ১৭ শো শতকের সমাধিস্থল। সেখানেও রয়েছে পাথরের ভাস্কর্যশিল্প। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকাভুক্ত এই মসজিদ।
৪. মেধু জিয়ারাই শ্রিন :
ফ্রাইডে মস্ক পেরিয়ে কয়েক কদম গেলেই ফ্রাইডে মস্ক। কিংবদন্তি বলে, ইসলামের মরোক্কান পণ্ডিত আবুল বারাকাত ইউসুফ আল বারবারির সমাধি স্থান পেয়েছে এখানেই। তিনি এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন।
৫. সুলতান পার্ক : দেশের স্বাধীনতার ৩০ বছর পূর্তিতে যে রিপাবলিকান স্থপতি উদ্বোধন করা হয় তার সামনেই সুলতান পার্ক। বড় বড় গাছ আর রং বেরংয়ের ফুটে থাকা ফুল পার্কটিকে অপরূপ শোভা দিয়েছে। এক সময় এখানে মালদ্বীপের রাজকীয় প্রাসাদগুলো গড়ে উঠেছিল।
৬. জাতীয় জাদুঘর : প্রথম ১৯৫২ সালে জাদুঘর খোলা ঞয়। পরে বড় ধরনের সংস্কার কাজের মধ্য দিয়ে নতুন চেহারা পায় এটি। পরে ২০১০ সালে উন্মুক্ত করা হয় সবার জন্য। অমূল্য সব সংগ্রহশালা হয়ে উঠেছে এটি। ইসলামের আগের সময় থেকে শুরু করে পরের সময়ের অনেক হস্তনির্মিত নিদর্শন রয়েছে এখানে। মালদ্বীপের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য তুলে ধরে হস্তশিল্পের সংগ্রহ।
৭. সুনামি মনুমেন্ট :
মালের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিমে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুনামি মনুমেন্ট। ২০০৪ সালে ভারত সাগরের ভূমিকম্প আর সুনামির দুঃস্বপ্ন বহন করছে এই স্থাপনা। অসংখ্য জীবন শেষ হয়ে যায় ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগে। অনেক প্রাণ স্রেফ হারিয়ে যায়। স্টেইনলেস স্টিলের স্থাপনাটিতে মৃত্যুর সংখ্যাও প্রকাশ করে গোলাকার নকশাগুলো।
শুধু এই স্থানগুলো দেখাই কিন্তু একমাত্র কাজ নয়। আপনি যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে পারবেন এখানকার শপিং সেন্টারগুলোতে ঘুরে ঘুরে। চমৎকার সব রেস্টুরেন্টে উপভোগ করতে পারবেন মুখরোচক খাবারের স্বাদ।
সূত্র : এমিরেটস
![bhorersanglap](https://bhorersanglap.com/wp-content/uploads/2023/10/CROPATRO-scaled.jpg)