শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জার্মানিতে মানববন্ধন: নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি প্রবাসীদের

ভোরের সংলাপ ডট কম :
আগস্ট ৩, ২০১৮
news-image

বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনার জন্য নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে দায়ি করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে বাংলাদেশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে বন শহরের কেন্দ্রস্থল মুনস্টারপ্লাটসে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান তারা।

প্রবাসী সাংবাদিক অনুপম কুমার কানুনজ্ঞর সঞ্চালনায় বন ও এর আশপাশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনারত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবিরা এ সমাবেশে অংশ নেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতার প্রতি একমত প্রকাশ করে তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে একটি নিয়মিত ঘটনা। সড়কে যানবাহনের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। এ খাতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

প্রবাসী সাংবাদিক অমৃতা পারভেজ বলেন, “নিরাপদ সড়ক প্রতিটি মানুষের সাধারণ অধিকার। এর জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে কেনো? এটাতো নাগরিক হিসেবে আমাদের পাওনা। শিক্ষার্থীরা সেই অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমেছে। আমরা যারা এখানে কর্মসূত্রে বা শিক্ষাসূত্রে আছি, তারা এ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানাতে আজ সমবেত হয়েছি। কিন্তু তাদের উপর আজ যে হামলা হয়েছে তার ধিক্কার জানাচ্ছি।”

গবেষক মারুফ মল্লিক বলেন, “বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ত্রুটি রয়েছে। এ কারনে বিভিন্ন খাতে অনিয়ম দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে এসব ত্রুটি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা এটিও আমাদের দেখিয়েছে কীভাবে ভাঙচুর না করে সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করা যায়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জনবান্ধব নয়। এমন হওয়ার কথা ছিল না। কীভাবে বাংলাদেশকে আরও জনবান্ধব করা যায় এ আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।”

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম বলেন, “আজ স্কুলগামী বাচ্চারা পথে নেমে এসেছে। কখন স্কুলগামী বাচ্চাদের পথে নেমে আসতে হয়? ওরা নিরাপদে স্কুলে যেতে পারছে না। বাসায় ফিরতে পারছে না। আমারা তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। এটা আমাদের জন্য বিশাল ব্যর্থতা।”

আবুল কালাম আজাদ বলেন, “পুলিশের ডিআইজির চালকের গাড়ি চালনার লাইসেন্স নেই। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের পুলিশের এক বড় কর্মকর্তার গাড়ি চালকের লাইসেন্স নেই। সেখানে সাধারণ মানুষের লাইসেন্স থাকবে এটা আমরা আশা করতে পারি না। বিআরটিএ থেকে এক লাখ ৯৮ হাজার লাইসেন্স বের করে নিয়ে গিয়েছে কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই। এ যদি হয় অবস্থা তবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা কীভাবে নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারি!”

অধ্যাপক সাইমুম পারভেজ বলেন, “বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করার সূত্রে আমি যতটুকু দেখেছি, কোনো দেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও যদি সে দেশের মানসিকতা বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের মানসিকতা ঠিক থাকে তবে পরিবহন খাত সুশৃঙ্খল করা সম্ভব। মানুষ কিন্তু সব সময় অনিয়ম করবে সেটা নয়। কিন্তু তার আগে নিয়মটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে কোমলমতি শিশুদের পথে নামতে হয়েছে। এটা আমাদের ব্যর্থতা।”

সরকার ‘শিশুদেরও কথা বলতে দেয় না’ অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, “লজ্জাজনক যে শিশুদের উপর পুলিশ ও গুণ্ডারা হামলা করেছে। সরকার যদি শিশুদের কথা বলতে না দেয়, তাহলে এ আন্দোলন চলতেই থাকবে। এটা একটি স্ফুলিঙ্গ। এখান থেকে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে। এর সঙ্গে বড়রাও যোগ দেবে এবং একটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেবে।”

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ হোসেন বিধু বলেন, “পরিবহন খাত কারা নিয়ন্ত্রণ করে এটি আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এর সঙ্গে বিশাল বড় এক মাফিয়াগোষ্ঠী জড়িয়ে আছে। এ কারনেই এ খাতে শৃঙ্খলা আনা যায় না। এ মাফিয়াদের কারা মদদ দেয় তা বের করতে হবে।”

বন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পিএইচডি গবেষক আমৃত কুমার সংহতি জানিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়ে বলেন, “শিশুদের উপর হামলা করা খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার খুবই বিপর্যকর একটি ঘটনা। প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমাদের সরকারগুলো এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসমাইল হোসেন সিরাজি ও সেতুল মোনা শুকতারা।

bhorersanglap