বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ই-বিআইএন নিবন্ধন চলবে, শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর

ভোরের সংলাপ ডট কম :
জুলাই ৩০, ২০১৭
news-image

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে স্বচ্ছ, দ্রুততর ও হয়রানিমুক্ত করার লক্ষে নতুন ভ্যাট আইনকে সামনে রেখে ইলেকট্রনিক ব্যবসায়িক সনাক্তকরণ নম্বর (ই-বিআইএন) নিবন্ধন শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

শেষ পর্যন্ত সরকার আগামী ২ বছরের জন্য নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত করার পর অনলাইন ভ্যাট ব্যবস্থা নিয়ে শুরু হয় নানা গুজব। আর সকল গুজবের পরিসমাপ্তির জন্য অনলাইনে ৯ ডিজিটের ই-বিআইএন বাধ্যতামূলক করে নতুন করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজস্ব আদায়কারি সংস্থাটি। নতুন গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ই-বিআইএন নিতে হবে। এরই মধ্যে অনলাইনে প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে বলেও সংস্থাটি জানায়।

গত ২৭ জুলাই জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনলাইনে ৯ ডিজিটের ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ কোনোভাবেই শুধু নতুন ভ্যাট আইন (মূল্য সংযোজন কর আইন ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২) এর সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। এটি ১৯৯১ আইনের আওতায় করদাতাদের উন্নত সেবা প্রদানের গতিকে ত্বরান্বিত করবে। ব্যবসায় সনাক্তকরণ সংখ্যা নির্ধারণ, রিটার্ন সংখ্যা বৃদ্ধি, হয়রানিমুক্ত ও করদাতাবান্ধব প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করবে। তাই ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন (ই-বিআইএন ) ছাড়া ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।

রাজস্ব আহরণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা আনয়ন তথা রাজস্ব আহরণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে ভ্যাট ব্যবস্থায় নিবন্ধন কার্যক্রমের ডিজিটাইজেশন অপরিহার্য। তাই ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ অনলাইনভিত্তিক ভ্যাট ব্যবস্থায় নিবন্ধন কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয়। বিদ্যমান সনাতনী ভ্যাট ব্যবস্থায় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ প্রতিষ্ঠানের বিআইএন নম্বর রয়েছে। কিন্তু প্রতি মাসে মাত্র ৩৭ হাজার করদাতা নিয়মিত দাখিলপত্র (রিটার্ন) প্রদান করেন। ফলে অনেক অস্তিত্বহীন নিবন্ধিত করদাতা যেমন রয়েছেন তেমনি ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান থাকা সত্ত্বেও অনেক করদাতা নিয়মিত দাখিলপত্র জমা দেন না বা করজালের বাইরে অবস্থান করছেন। সার্বিকভাবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ, নিবন্ধন গ্রহণের প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, দ্রুততর ও হয়রানিমুক্ত করার লক্ষ্যে মূলত অনলাইন নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করে এনবিআর।

মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ১৫ ধারা ও মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা, ১৯৯১ এর ৯ বিধিতে করদাতাদের নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশেষ ৯ বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বোর্ড কর্তৃক আদেশ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে অনলাইনে নিবন্ধনের আবেদন পেশ করা যাবে। সুতরাং যারা অনলাইনে ৯ ডিজিটের নিবন্ধন নিয়েছেন তাদের নিবন্ধনগুলো কার্যকর রাখা এবং অনলাইনে নিবন্ধন ব্যবস্থা চলমান রাখা হবে; কেন্দ্রীয় নিবন্ধন ও ইউনিট নিবন্ধন এ দুইটি পদ্ধতিতে।

কেন্দ্রীয় নিবন্ধন সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে সকল প্রতিষ্ঠান মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর আওতায় কেন্দ্রীয় নিবন্ধন (১১ ডিজিটের বিআইএন) গ্রহণ করে ব্যবসায় পরিচালনা করছেন তারা অনলাইনেও কেন্দ্রীয়ভাবেই নিবন্ধিত হবেন এবং ৯ ডিজিটের বিআইএন গ্রহণ করে প্রচলিত নিয়মেই কর পরিশোধসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

যেমন, একটি প্রতিষ্ঠান দেশব্যাপী বিভিন্ন কমিশনারেটের অধীন ৫০টি ইউনিটের মাধ্যমে ব্যবসা করেন। এ প্রতিষ্ঠান আইনের ধারা ১৫(২)-এর দ্বিতীয় শর্তাংশ অনুসারে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধন গ্রহণ করে ব্যবসায় করেন। এ প্রতিষ্ঠান অনলাইনেও ৯ ডিজিটের একটি নিবন্ধনের মাধ্যমে দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

যে সকল প্রতিষ্ঠান দুই বা ততোধিক স্থান হতে করযোগ্য পণ্যের উৎপাদন বা সেবা প্রদান বা ব্যবসায় পরিচালনা করছেন এবং আইনের আওতায় প্রতিটি স্থানের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের জন্য আলাদা নিবন্ধন গ্রহণ করে সংশিষ্ট বিভাগীয় দপ্তর ও সার্কেল অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা প্রতিটি ইউনিটের জন্য অনলাইনে ৯ ডিজিটের পৃথক পৃথক নিবন্ধন গ্রহণ করবেন।

এসব ইউনিটের একটি টিআইএন থাকলেও প্রতিটি ইউনিটের জন্য ৯ ডিজিটের আলাদাভাবে একটি করে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি ইউনিট সেই নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে বর্তমানে যে সার্কেলে দাখিলপত্র পেশ করেন সেই সার্কেলে যথারীতি দাখিলপত্র পেশ করবেন এবং আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য কার্যক্রমও ইউনিটের বিআইএন দিয়ে উক্ত আইনের অধীন পরিচালিত হবে।

সূত্র আরো জানায়, যে সকল প্রতিষ্ঠান একাধিক ইউনিটের জন্য আলাদা নিবন্ধন (১১ ডিজিট) গ্রহণ করে ব্যবসায় পরিচালনা করছে এবং ১৫ মার্চের পর কেন্দ্রীয়ভাবে সদর দপ্তরের ঠিকানায় একটি নিবন্ধন (৯ ডিজিটের) গ্রহণ করেছে তাদেরকে নতুন করে প্রতিটি ইউনিটের জন্য আলাদাভাবে (৯ ডিজিটের) ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তবে মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত ৯ ডিজিটের কেন্দ্রীয় নিবন্ধনটি অকার্যকর থাকবে। তা দিয়ে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না এবং কোনো দাখিলপত্রও পেশ করতে হবে না। যে সকল প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ইউনিটের আলাদা নিবন্ধন (১১ ডিজিট) নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা বিদ্যমান আইনের আওতায় ৯ ডিজিটের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন গ্রহণ করবেন।

ইউনিট নিবন্ধন সম্পর্কে বলা হয়, অনলাইন নিবন্ধনের আলোকে ৯ ডিজিটের ইউনিট রেজিস্ট্রেশনগুলো তাদের ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী স্ব স্ব কমিশনারেটে যথারীতি দাখিলপত্র প্রদান করবে। যে সকল প্রতিষ্ঠান এখনো অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করেননি তাদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ ডিজিটের নিবন্ধন নিতে হবে। তবে যে সকল প্রতিষ্ঠান ৯ ডিজিটের ই-বিআইএন গ্রহণ করেছেন তারা তা ব্যবহার করবেন। এনবিআর সহসাই ১৯৯১ এর সাথে সঙ্গতি রেখে অনলাইন ব্যবস্থাকে পুন:সংস্কার করবে।

bhorersanglap