বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

উচ্ছেদ হকারদের বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ ডিএসসিসির

ভোরের সংলাপ ডট কম :
জুন ৭, ২০১৭
news-image

ডেস্ক রিপোর্ট: ঈদ উপলক্ষে ফুটপাতে বসতে দিতে হকারদের আবেদনে কোনো সাড়া দেয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তবে রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, নিউমার্কেট এলাকা থেকে উচ্ছেদ হকারদের পুনর্বাসনের জন্য তাদের বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে ১২ জুন নগর ভবনে একটি সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে হকার নেতাদের ডাকা হচ্ছে।

রাজধানীতে ফুটপাত এমনকি মূল সড়ক দখল করে হকারদের পণ্য নিয়ে বসা বন্ধে বারবার অভিযান হলেও তা কোনো ফল দিতে দেখা যায়নি অতীতে। তবে গত জানুয়ারি ডিএসসিসি এ কাজে অনেকটা সফলতা দেখিয়েছে। যেসব ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেখানে গত ছয় মাসে বসতে পারেনি হকাররা। ফলে রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে এখন স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারছে পথচারীরা।

ডিএসসিসি অবশ্য অফিস সময়ের পর বিকেলের দিকে হকারদের বসার অনুমতি দিয়েছে। তাতে সন্তুষ্ট নয় হকাররা। নিজেদের পুনর্বাসন চেয়ে তারা সাম্প্রতিক সময়ে রাজপথে আন্দোলন করলেও ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন তার সিদ্ধান্তে অটল। ঈদ সামনে রেখে দিনব্যাপী ফুটপাতে বসার জন্য হকারদের আবেদনেও সাড়া দেননি তিনি। সময়ের আগে যাতে হকাররা ফুটপাতে বসতে না পারে সে জন্য বেশ কিছু কর্মী নিয়োগ দিয়েছে ডিএসসিসি, যারা ‘লাল বাহিনী’ নামে পরিচিত।

মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল, বায়তুল মোকারম, পল্টন, গুলিস্তান ঘুরে দেখা যায়, অফিস কর্মসময়ে কোথাও হকারদের বসতে দেয়া হচ্ছে না। ‘লাল বাহিনী’ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন পাহারায়।

ডিএসসিসির সূত্র জানায়, সাময়িক সময়ের জন্য হকারদের ফুটপাতে বসতে দেয়া মানে ঝামেরার আশঙ্কা। তাই কোনো উপলক্ষেই আর হকারদের ফুটপাতে বসতে দেবেন না মেয়র। তবে হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। উচ্ছেদ করা হকারদের প্রাথমিকভাবে বিদেশে পাঠানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১২ জুনের সেমিনারে হকারদের বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

এর আগে গত ১১ জানুয়ারি হকারদের সংগঠন হকার্স ফেডারেশনের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ও মেয়র সাঈদ খোকন জানিয়েছিলেন, দুই হাজার ৫০৬ জন হকারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ চাকরি করতে চাইলে দেশে বা বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা করবে সিটি করপোরেশন।

মেয়রের এই তালিকাকে ভুয়া বলে দাবি করছেন হকার নেতারা। তারা এখনো আশা করেন, সামনে যে কদিন আছে ঈদের, ফুটপাতে বসতে দেয়া হবে তাদের। আর হকারদের বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ ভালো হলেও তার সঙ্গে হকার উচ্ছেদের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন একজন হকার নেতা।

হকার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবুল হোসেন বলেন, ‘রাজধানীতে প্রায় পাঁচ লাখ হকার রয়েছে, সিটি করপোরেশন কয়জনকে বিদেশে পাঠাবে। হকারদের বিদেশে পাঠিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না।’ তিনি হকারদের আপাতত ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে পরে পুনর্বাসনের আলোচনার দাবি জানান।

২০০১ সালে বিচারপতি আবু সাঈদ আহাম্মেদ ও বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ফুটপাত পরিচ্ছন্ন এবং উন্মুক্ত রাখতে নির্দেশ দেয়। ২০১০ ও ২০১২ সালে সদরঘাট ও মৎস্য ভবন থেকে সেগুনবাগিচা এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতেও আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অধ্যাদেশ ১৯৭৬ ও ঢাকা সিটি ম্যানুয়াল ১৯৮২-তেও ফুটপাত দখলমুক্ত এবং পথচারীদের হাঁটার উপযোগী রাখার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু হকার উচ্ছেদে সিটি করপোরেশন ‘অবৈধভাবে’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন হকার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে তারা (ডিএসসিসি) সরে আসে নাই। ফলে এখন তাদের নিয়োজিত বাহিনীর (লাল বাহিনী) সঙ্গে দেনদরবার করে, বাহিনীকে কিছু পয়সাপাতি দিলে তারা একটু নীপিড়ন কম করে।’ এই অবস্থা চলতে থাকলে ঈদের পর আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

উচ্ছেদ হকারদের দুর্দশা চলছে জানিয়ে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক­ আব্দুল হাশিম কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আর কয়েক দিন পরেই ঈদ। আমরা আশা করছিলাম অন্তত মাহে রমজানে আমাদের দোকানদারি করতে দেয়া হবে। ঈদে পরিবার-পরিজনের জন্য কিছু হলেও করতে পারতাম।’ তবে এখনো তিনি আশাবাদী, ‘আমরা মেয়রের কাছে আশাবাদী, অন্তত ঈদের যে কদিন বাকি আছে সেই কদিন আমাদের পূর্ণ দিবস দোকানদারি করতে দেয়া হোক।’

এখন যে সময়টুকু তাদের বসতে দেয়া হয় তাতে পোষায় না বলে জানান এই হকার নেতা। বলেন, ‘পাঁচটার পরে আমারা দোকান লাগাই, তার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় ইফতার। ইফতারের পর নগরবাসী বাসায় চলে যায় অনেকে, তখন তেমন কোনো ক্রেতা থাকে না। এ অবস্থায় যে বেচাকেনা হয় তাতে সামান্য হাতে আসে।’

হকার পুনর্বাসনের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই বলে দাবি করেন হকার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক আব্দুল হাশিম কবির বলেন, গুলিস্তান এলাকায় ২৫০৬ জন হকারের তালিকা করছে। কিন্তু ওই তালিকায় বেশির ভাগই ভুয়া হকার। মেয়র তার আজ্ঞাবহ লোক দিয়ে সেই তালিকা করছে। এই তালিকা দিয়ে কখনো হকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে না। প্রকৃত হকারদের পরিচয়পত্র দিয়ে তাদের পুনর্বাসন করা হোক।’

রোজার মধ্যে ফুটপাতে দোকান বসানোর জন্য হকারদের বেশ কয়েকটি আবেদন পাওয়ার কথা জানান সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। হকারদের হলিডে মার্কেটে বসার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

বিদেশে চাকরি দিয়ে হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বলেন, হকারদের বিদেশে পাঠানোর জন্য ১২ জুন নগর ভবনে একটি সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৩০ জন হকার নেতাকে ডাকা হবে সেমিনারে। হকারদের রেজিস্টার্ড সংগঠনগুলো থেকে, যাদের প্রতিনিধি আমাদের এখানে আসেন, তাদের নেতাদের ডাকা হবে। বিএমইটির প্রশিক্ষকরা তাদের বাস্তব ধারণা দেবেন।

বিদেশ যেতে হকারদের কাছ থেকে আবেদন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান কামরুল ইসলাম। তার ভাষ্য, এ পর‌্যন্ত ৬৯ জন হকার আবেদন করেছেন বিদেশ যেতে।

হকারদের বিদেশ পাঠানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বলেন, বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে যারা যারা যেতে আগ্রহী তাদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় হকারদের পুনর্বাসন তাদের (হকার) আগ্রহের ওপর নির্ভর করবে বলে জানান তিনি।

কোন দেশে হকার পাঠানো হবে জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে জিটুজি পদ্ধতিতে কিছু লোক নেয়া হলেও তা আপাতত বন্ধ আছে। অন্য যেসব দেশে আমাদের শ্রমবাজার আছে, সেগুলো কীভাবে সরকারিভাবে হকারদের পাঠানো যায়, সেটা দেখা হবে। এই কারণে আমরা বিএমইটিকে ডাকছি, বায়রাকেও ডাকব।
সূত্র: ঢাকা টাইমস

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন