শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আমাদের হল দিন মা : ক্যান্সারে আক্রান্ত জবির নীরব

ভোরের সংলাপ ডট কম :
মে ২২, ২০১৭
news-image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবাসিক হল চেয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন ক্যান্সার আক্রান্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মেধাবী শিক্ষার্থী এএইচ মোকলেছুর রহমান ওরফে নীরব।

জাগো নিউজের মাধ্যমে তিনি মমতাময়ী দেশমাতা, ১৬ কোটি বাঙালির অভিভাবক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার চিঠিটি পাঠকের জন্য হুবহু উপস্থাপন করা হলো-

“মা,

জানি না আমার এ গুরুত্বহীন কিছু কথা আপনার দৃষ্টিগোচর হবে কি না! তারপরও কারো জন্য না হোক আমার নিজের জমানো কষ্ট আর ধরে রাখতে না পেরে অব্যক্ত কথাগুলো আজ ব্যক্ত করলাম।

আমি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগী। লেখাটা একটু বড়। এতটা অসুস্থতার মধ্যেও অনেক কষ্ট করে কথাগুলো লিখেছি, বেশ কয়েকবার বমিও হয়েছে তার পরও লিখেছি। আমার অনুরোধ সবাই কষ্ট করে হলেও একটু পড়বেন।

আমি এএইচ মোকলেছুর রহমান (হাসান)। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই নীরব নামে চেনে। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। ২০১০ সালে সাতক্ষীরা পিএন হাই স্কুল ও কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পাই। সেবার ২০১০ সালে মানবিক বিভাগে সাধারণ গ্রেডের বৃত্তিতে যশোর বোর্ডের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করি (রোল: ২৫০১২৯)। ২০১২ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৬০ পাই। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আশানুরূপ ও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। যে কারণে প্রথমবার ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় তেমন আশানুরূপ ফলাফল করতে পারিনি। ভেঙে পড়লাম না। নিজের মনকে বোঝালাম ভেঙে পড়লে চলবে না। ঠিক এমন সময় আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২-৩ বার হার্ট অ্যাটাক হয়। তারপরও নিজের মনকে আরো শক্ত করলাম ভালো কোনো ভার্সিটিতে আমাকে চান্স পেতেই হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকায় গিয়ে কোচিং করব। এরপর ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসি। কথাগুলো না বললেই নয় সেজন্য বলা। কারণ বাস্তব জীবন কাকে বলে সেটা অনুধাবন করার সুযোগ তখনো আসেনি।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউসিসি কোচিংয়ে ভর্তি হলাম এবং তেজকুনিপাড়ার একটি হোস্টেলে উঠলাম। থাকা ও খাওয়ার জন্য চুক্তি করলাম প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা। ভার্সিটি এডমিশনের প্রস্তুতি শুরু করলাম। তার পরেও মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খায়, বাবা অসুস্থ…! বাসা থেকে প্রায়ই খবর পেতাম, বাবার শরীর তেমন ভালো যাচ্ছে না। আবার এদিকে মাস শেষ হবার পথে। মাস শেষ হলেই আবার হোস্টেলে টাকা দিতে হবে। আগেই বলে রাখি বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না। আবার বাবার এ অসুস্থতা…। কিছুই বুঝতে পারলাম না কি করব? ঠিক করলাম আমাকে নিজেই কিছু একটা করতে হবে, অর্থ জোগানোর জন্য।

কিন্তু এদিকে আবার আমি দ্বিতীয়বারের মতো ভার্সিটির এডমিশন ক্যান্ডিডেট। যদি পড়াশোনা না করি তবে ভালো কোনো ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারব না। তার পরেও নিজেকে বোঝালাম পরিবারের দিকে তাকিয়ে হলেও আমাকে কিছু একটা করতে হবেই। বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতে, তার মুখের হাসিটুকু দেখতে আমাকে এটা করতেই হবে। যা হোক মাথায় একটা পরিকল্পনা আসলো। আমি যে হোস্টেলে থাকতাম সেখানে প্রায় ১০০-১২০ জনের মতো ছাত্র থাকত। আমি হোস্টেলের ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করে আমার সমস্যার কথা খুলে বললাম এবং এটাও বললাম আপনার হোস্টেলে মাসে অনেক হলুদ ও মরিচের গুঁড়া লাগে, যদি ওগুলা আমার কাছ থেকে নিতেন তবে অনেক উপকাত হতো। যা হোক সাতক্ষীরা থেকে হলুদ ও মরিচের গুঁড়া সরবরাহের একটা মাধ্যম ছিল।

সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবন কুরিয়ারের মাধ্যমে সেগুলো সরবরাহ শুরু করলাম। কল্যাণপুর থেক তেজকুনিপাড়ার দূরত্ব বেশ অনেক ছিল। এছাড়া যোগাযোগের মাধ্যমটা ভালো না থাকায় আমাকে প্রায় দুই কিলোমিটারের মতো পথ সেই হলুদ ও মরিচের গুঁড়ার বস্তা হাতে টেনে নিয়ে যেতে হতো। বলে রাখি, যদি বস্তাতে ২৫ কেজি গুঁড়া থাকতো সেটা হাতে বহন করলে ৫০ কেজি মনে হতো। তাই কষ্ট কমানোর জন্য লোকলজ্জার কথা না ভেবে বস্তা মাথায় করে নিতাম আর মনকে এই ভেবে সান্ত্বনা দিতাম একদিন যখন অনেক বড় হবো সেদিন মিডিয়াকে বলার মতো কিছু ইতিহাস তো থাকবে…!

যা হোক অনেক কষ্টের পর তার ফলও পেলাম। দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের ৩-৪টিতেই মেধাক্রমে টিকে গেলাম। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকাতেই থাকব। ঢাকা ভার্সিটিতে ডি ইউনিটে ওয়েটিং থাকায় এবং ভালো বিষয় পাবার আশা না থাকায় ভর্তি হলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ভর্তির শুরুতেই দেখি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আন্দোলন। যা হোক সেদিকে যাব না। মাথার মধ্যে ভালো করে ঢুকিয়ে নিলাম নিজের খরচ নিজে চালিয়েই পড়াশোনা করতে হবে। পরবর্তী সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভার্সিটির ছাত্র হিসাবে বেছে নিলাম গৃহশিক্ষকের পথ। কিন্তু অপরিচিত এ ঢাকায় আমাকে কে টিউশনি খুঁজে দেবে? তাই কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেই টিউশনির অনুসন্ধান শুরু করলাম। পড়াইতে চাই… এই বলে বেশকিছু লিফলেট ছাপালাম।

তেজকুনিপাড়া থেকে শুরু করে আগারগাঁও, তালতলা, মিরপুর হয়ে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত লিফলেট লাগালাম সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। অতঃপর মোহাম্মদপুরে একটি টিউশনি পেলাম। মাসে দেবে ২,৫০০ টাকা। যাক কিছুতো একটা হলো। এরপর পূর্বপরিচিত বন্ধুদের সাথে মোহাম্মদপুরে একটি মেসে উঠলাম। মাসে থাকা খাওয়া, পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ প্রায় ৮-১০ হাজার টাকার মতো। আমার খুব সামান্য ইনকাম, ২৫০০ টাকা। বাসায় টাকা চেতে পারতাম না। ভাবতাম যদি বাবা-মা জানেন যে তার ছেলে কষ্ট করে পড়াশোনা করছে তাহলে তারা খুব খুশি হবেন। তার পরেও সামান্য কিছু টাকা নিতাম। সর্বসাকুল্যে মোট অর্থ জোগান হতো ৪,৫০০-৫,০০০ টাকার মতো। বাকিটা প্রতি মাসেই ঘাটতি। কোথা থেকে ম্যানেজ করব? যে কারণে মেসের টাকাটাই সময়মতো দিতে পারতাম না। চলতি মাসের টাকা দিতাম তার পরের মাসে বা তারও পরের মাসে। যেটা ঢাকার কোনো মেসে হয় কিনা আমার জানা নেই। সবাই ছাত্র ছিলাম, যে কারণে সবারই টাকার সীমাবদ্ধতা ছিল। আমার এ ঘাটতির কারণে প্রতি মাসের প্রায় শেষের ৮-১০ দিন সবাইকে না খাওয়া থাকতে হতো। কারণ একটাই আমি মেসে টাকা দিতে পারতাম না। ভাবলাম মোহাম্মদপুর থেকে সদরঘাট অনেক দূর। তাছাড়া মোহাম্মদপুরে থাকার খরচটাও অনেক বেশি। কিন্তু সদরঘাট যেয়ে এ মুহূর্তে কোথায় থাকব, কোথায় উঠব, সেখানে কোনো টিউশনি পাব কিনা- এসব ভেবে মোহাম্মদপুরেই থেকে যেতে হলো। মোহাম্মদপুরের দিনগুলা কেমন ছিল একটু না বললেই নয়।

juসত্য বলতে আমার কাছে নগদ কোনো টাকাই থাকত না। কারণ যে অল্প টাকা পেতাম সেটা গত ও বিগত মাসের বকেয়া পরিশোধেই শেষ হয়ে যেত। ভোর সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হতাম। রেডি হয়ে বাইরে বের হবার সময় দুই বন্ধু প্রিন্স ও তারেকের মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা (৩০-৫০) নিতাম, যদিও ওরা জানত। সাড়ে ৬টার মধ্যে শ্যামলীতে ভার্সিটির বাসের জন্য দাঁড়াতাম। বাসে খুব কষ্ট করে ছাত্র-ছাত্রীদের উঠতে হয় কারণ আমাদের বাসের সিট সংখ্যার তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি। এছাড়া রয়েছে বাসের স্বল্পতা। যদি বসার জায়গা পেতাম, মনে হতো সোনার হরিণ পেয়েছি। আর যদি না পেতাম তবে বান্দরের মতো বাসের বাম্পারে ঝুলতে ঝুলতে ভার্সিটি পৌঁছাতাম। সকালে ক্যান্টিন থেকে ২০ টাকার সবজি খিচুড়ি (প্রতিদিন) খেতাম। তারপরে ক্লাস থাকলে ক্লাস, না থাকলে সেমিনার, লাইব্রেরি বা বন্ধুদের আড্ডায় কখন যে দুপুরের খাবারের কথা ভুলে থাকার অহেতুক চেষ্টা করতাম, নিজেই জানতাম না। কারণ দুপুরে খাবার মতো টাকা বেশির ভাগ দিনই থাকত না। সবাই বলবেন, বাবার কাছে কেন বলিনি? হ্যা! বলিনি, মুখফুটে টাকার কথা বলিনি বরং বাবাকে আরো বেশি আশা দিয়েছি। বলেছি যে, বাবা আমি অনেক ভালো আছি। ২-৩ বার হার্ট অ্যাটাক করা বাবাকে কে না খুশি দেখতে চায় বলেন? কেউ না চাক আমি চাই, কারণ আমি অন্য কেউ ছিলাম না, আমি আমিই ছিলাম। ভার্সিটির বাসেই ফিরতাম বিকাল ৫-৬টার দিকে। ৯টার দিকে মেসে ফিরতাম। সেই একই ঘটনা, মেসে বাজার হয়নি রান্নাও হয়নি। কারণ আগেরটাই! মেসে চলতি মাসে কোনো টাকাই দেয়া হয়নি। লজ্জা লাগতো অনেক, আমার জন্য অন্য সবাইকে আমি কষ্ট দিচ্ছি। বন্ধুত্বের খাতিরে ওরা কিছুই বলতো না। শুধু নীরবে সহ্য করে যেত। অন্যরা বাইরে থেকে খেয়ে আসতো, আমাকে বললে লজ্জার খাতিরে বলতাম, আমি খেয়ে এসেছি বা স্টুডেন্টের বাসা থেকে খেয়ে এসেছি। না খেয়ে দুপুর ও রাত পার করার স্বভাবটা রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। খুব যখন কষ্ট হতো, মনকে সান্ত্বনা দিতাম যদি নাই বা কষ্ট করি তবে অনেক বড় হয়ে সবাইকে কিভাবে বলব যে আমি অনেক কষ্টে বড় হয়েছি? তাই আবারও সেই না হারা মনোবল নিয়ে দৃঢ় চিত্ত নিয়ে শুধু সংগ্রাম করে যেতাম আর নিজেকে নিজের কাছে প্রতিনিয়ত লুকাতাম।

ক্যাম্পাসের অনেকে বলবে কই তোমাকে বা তোমার পোশাকে-তো কখনো মনে হয়নি যে তুমি এমন। আসলে আমার পোশাকগুলো নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে ১৫০-২০০ টাকার মধ্যেই খুঁজে নিতাম। আর জুতার ব্যাপারটা হলো গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া ফ্লাইওভারের নিচের চোরাই জুতা। ৩,০০০ হাজার টাকার জুতা ৩০০ টাকায় পাওয়া যায়। সেটাই বন্ধুদের কাছে বাড়িয়ে বলে নিছক আনন্দ পেতাম!

এতগুলো কথা বলারই ছিল। আজ যা বলবো সব সত্য ও উন্মুক্ত করে বলবো…

আজ আমার পাকস্থলীতে ক্যান্সার, একদিনে হয়নি অবশ্যই…। পাকস্থলী ক্যান্সারের কারণগুলা সবারই জানা। যারা অতিরিক্ত তামাক বা তামাকজাতদ্রব্য গ্রহণ করে তাদেরই এ রোগ বেশি হয়, আর হয় আলসার থেকে। সবাই হয়তো বুঝতে পেরেছেন, এ রোগের কারণটা তামাকজাতদ্রব্য নয় বরং না খাওয়া থেকে। সবার কাছে আমার শুধু একটা প্রশ্ন, বলুন তো ঠিক কতটুকু খাবারের কষ্ট পেলে মানুষের এমনটা হয়? অনেকে বলে দুই টাকা দিয়ে একটা বিস্কুটও খেতে পারতে, তবে সেটা কেন করনি? সত্যি বলছি ভাই! আমার কাছে বেশির ভাগ সময় দুই টাকাও থাকত না। এখানেও আবার অনেকে বলবেন, বাবা-মাকে কেন বলিনি? জেদি ছিলাম, দৃঢ় চিত্তের ছিলাম, হারতে নারাজ ছিলাম, জানতাম এ কষ্টের ফল পাবই, এজন্য খুব পরিশ্রমও করতাম, পড়াশোনাও করতাম।

এবার আমার প্রশ্ন সবার কাছে, খাওয়ার কষ্ট কেন পাব না? সকালে ঘুম থেকে যেখানে উঠলেই মনে হয় কিভাবে এ মাসের ঘরভাড়ার (৩০০০-৩৫০০) টাকাটা দেব, খাওয়ার কথাতো দূরে থাক! আচ্ছা একটা কথা বলতে পারেন, আমি পাবলিক ভার্সিটির ছাত্র হয়ে কেন ঘরভাড়ার চিন্তা করব? ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী বা অন্যান্য কোনো ভার্সিটির ছাত্ররা কি ঘরভাড়ার কথা আদৌ চিন্তা করে? তাহলে আমাকে কেন করতে হবে? আবারও প্রশ্ন করি, আমার এ মুহূর্তের কাজটা কী? অর্থের জোগান নাকি লেখাপড়া করা? আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রকে দেখেছি তারা তাদের খরচ চালিয়ে বাড়িতেও টাকা পাঠায়। আচ্ছা একটু চিন্তা করে বলবেন সবাই, হলে থেকে তাদের খরচ মাসে কত হতে পারে, আর আমাদের মেসে থেকে মাসে কত খরচ হতে পারে? আজ যদি আমাদের হল থাকত? কিছু না হোক মাথা গোঁজার জায়গাটুকু থাকলে খাওয়ার জোগান নিজেরাই দিতে পারতাম। আজ আমার মাথা গোঁজার জায়গা খুঁজতে যেয়ে মাথাটাই হারিয়ে যাবার পথে।

আমি এ এইচ মোকলেছুর রহমান (হাসান )। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের (নবম ব্যাচ) ছাত্র। তাছাড়া আমার আরও একটি বড় পরিচয়, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগের একজন প্রত্যক্ষকর্মী।

আমার ডিপার্টমেন্টে, আমার ব্যাচের আমি ফার্স্ট ক্লাস থার্ড ছিলাম। সিজিপিএ ছিল ৩.৬০ এর মতো। আমার ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাই (আমিনুল ইসলাম) ৩৫তম বিসিএস এডমিন ক্যাডারে সম্ভবত ৫৮তম স্থান লাভ করেন। যে কারণেই হোক না কেন, অভিমানবশত ভাইয়াকে বলেই ফেলেছিলাম, কমপক্ষে আপনার আগের স্থানটা দখল করে আপনার সাথে যোগাযোগ করব, ইনশাআল্লাহ্। আমি জানতাম আমি পারব। কারণ আমার মনোবল দৃঢ় ছিল। কিন্তু একি হলো আমার? কিছুই যে আর অবশিষ্ট থাকল না।

আজ যদি আমি একটু সহায়তা পেতাম, একটু মাথা গোঁজার জায়গা পেতাম, আমি হয়তো আজ চিকিৎসার জন্য হাত না পেতে দেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে পারতাম। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশীদার হতে পারতাম। কিন্তু আজ আমি নিঃস্ব। যেখানে আজ আমার স্বপ্নের দিন গোনার কথা সেখানে আজ আমি মৃত্যুর দিন গুনছি।

মা (প্রধানমন্ত্রী), আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক অবহেলিত, অনেক বঞ্চিত। আমরা তো নিজের যোগ্যতায় অনেক তুলনামূলক পরীক্ষাতেও ভালো করছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে অংশীদার হচ্ছি। তাহলে দিন না আমাদের আরো একটু সুযোগ, যাতে আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারি, আমরা সোনার বাংলার সন্তান, আমরা মুজিব সন্তান। দিন না আমাদের মাথা গোঁজার একটু জায়গা করে, যাতে মাথা গোঁজার অভাবে আমার মতো, আমার ভার্সিটির আর কোনো ফুলকে অকালেই ঝরে পড়তে না হয়। আমি না হয় আজ পূর্ণ প্রস্ফুটিত হতে পারলাম না, কিন্তু দিন না অন্যদের প্রস্ফুটিত হওয়ার একটু সুযোগ।

দিন না আমাদের একটু ঠাঁই পাবার বন্দোবস্ত করে।

আমাদের হল দিন মা…!”

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন