বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রেইনট্রিতে মিলেছে মদ, অভিযান আপন জুয়েলার্সে

ভোরের সংলাপ ডট কম :
মে ১৪, ২০১৭
news-image

দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আলোচিত বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে মদের খোঁজ মিলেছে। গতকাল অভিযানের সময় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে ১০ বোতল মদ জব্দ করেন। এ ঘটনায় হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করা হতে পারে। এ ছাড়া এ ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের পিতা দিলদার আহমেদের মালিকানাধীন আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। অভিযানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের ভ্যাট ও র‌্যাব কর্মকর্তারা অংশ নেন। পিতা-পুত্রের ডার্টি মানির খোঁজে এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক মইনুল খান।

 

 

 
গতকাল বেলা ১১টার দিকে হোটেল রেইনট্রিতে অভিযান চালান শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অভিযানকালে এ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, হোটেলের একটি কক্ষে বেশ কয়েক বোতল মদ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের শিকার তরুণীদের অভিযোগ অনুযায়ী, এ হোটেলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মইনুল খান বলেন, এই হোটেলের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা জানা প্রয়োজন। এ ছাড়া সমপ্রতি বিভিন্ন কারণে এই হোটেলটি আলোচনায় এসেছে। সেই সূত্রে অভিযান চালানো হয়েছে। প্রতিটি কক্ষেই তল্লাশি করা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে। বনানীর চার তারকা এই হোটেলের অন্যতম মালিক মাহিম হারুন যিনি ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা বজলুল হক হারুনের ছোট ছেলে।

 

 
আপন জুয়েলার্সের ৫ শাখায় অভিযান, একটি সিলগালা: এদিকে ডার্টি মানির খোঁজে রাজধানীতে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত অধিদপ্তর। এ শাখাগুলো হলো- গুলশানের ২টি, উত্তরা, মৌচাক এবং সীমান্ত স্কয়ার। এর মধ্যে গুলশান-১ এর একটি শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই অভিযান চলে।

 

 

 
আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদ ও তার ছেলে সাফাত আহমেদের ‘ডার্টি মানি’র কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তারা এই অভিযান চালালো। শুল্ক গোয়েন্দা যুগ্ম পরিচালক শফিউর রহমান বলেন, অভিযান চলাকালে আপন জুয়েলার্সের গুলশান শাখা বন্ধ পাওয়ায় সেটি সিল করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিযান চালানো হয় জুয়েলার্সের উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ার শাখায়। র?্যাবের সহায়তায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের শুল্ক কর্মকর্তারা যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেন। শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদ ও তার ছেলে সাফাত আহমেদের ‘ডার্টি মানি’র কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এই অভিযান চালানো হয়েছে। সাফাতের বাবা দিলদারের সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতে গত শুক্রবার ডেপুটি পরিচালক শরিফুল হাসানকে প্রধান করে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে শুল্ক গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দিলদার ও তার ছেলের ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে বলেও ওই শুল্ক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অভিযান চলাকালে মইনুল খান বলেন, আপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শাখার স্বর্ণ ও হীরার উৎস নিয়েও তদন্ত করা হবে। সেই সঙ্গে যে কোনো ধরনের কর ফাঁকির বিষয়টিও তারা খতিয়ে দেখছেন। মইনুল আরো বলেন, গত পাঁচ বছরে বাণিজ্যিকভাবে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে তাদের স্বর্ণ ও হীরার ব্যবসায় স্বচ্ছতার ঘাটতির বিষয়টি উঠে এসেছে।

 

 

 

 
বন্ধের দিনে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করার কারণ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শফিউর রহমান বলেন, আমরা সিলগালা করেছি যাতে উনারা কালকে আসার পর তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা তদন্ত করতে পারি। মার্কেট বন্ধ থাকার পরও ডিসিসি মার্কেটে ওরা দোকান খুলেছে। তারা যাতে দোকান থেকে কোনো কিছু সরাতে না পারে সেজন্য সিলগালা করেছি। এ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, আগামীকাল আপন জুয়েলার্সের মালিক বা তার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সিল করা দোকানটি খুলে এতে থাকা সোনাদানার পরিমাণ পরীক্ষা করা হবে। এর আগে অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, স্বর্ণ ও হীরার বৈধ উৎস এবং এসব জিনিস তারা যে পরিমাণে আমদানি করে তার শুল্ক-কর ঠিকমতো পরিশোধ করে কিনা সে বিষয়েও খোঁজ নেয়া হবে।

 

 

 
উল্লেখ্য, গত ২৮শে মার্চ বনানীর একটি হোটেলে জন্মদিনের আমন্ত্রণ দিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে অভিযোগে মামলার পর গত বৃহস্পতিবার দিলদারের ছেলে আহমেদ সাফাতের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের চেম্বারে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার বাদীরা। অভিযোগে জানা যায়, গত ২৮শে মার্চ রাত ৯টার দিকে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে যান ওই দুই তরুণী। মধ্যরাতে জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সাফাত ও নাঈম হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে রেখে তাদের ধর্ষণ করে। সাদমান সাকিফ, বিল্লাল ও আজাদ ধর্ষণে সহায়তা করেছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় পাঁচ আসামির সবাই মদ্যপ অবস্থায় ছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের একটি যৌথ দল সিলেটের একটি বাড়ি থেকে আহমেদ সাফাত ও সাদমান সাকিফকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার সকালে তাদের ঢাকা আনা হয়। ঢাকার আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ড চাইলে সাফাতকে ছয় দিন ও সাকিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। মামলার অন্য আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম, সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদকে খুঁজছে পুলিশ।

bhorersanglap