শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ভোরের সংলাপ ডট কম :
আগস্ট ৫, ২০১৭
news-image

ইয়াবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন।

তিনি বলেন, ভিশন-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বড় বাধা মাদকের আগ্রাসন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশের যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আর আমাদের দেশের অধিকাংশ জনগণই যুব সমাজ। সমাজের অর্থলিপ্সু মানুষ যুবকদের ইয়াবার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শুধু বল প্রয়োগ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্য সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মাদক তৈরি হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদক আসছে। মাদক প্রবেশ রোধে আমরা কাজ করছি। ভারতের সাথে প্রতিনিয়ত বিজিবির বৈঠক হচ্ছে। যার ফলে ভারত থেকে ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আসছে। তবে মায়ানমার থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ মাদক ইয়াবা আসছে। তাদের সাথেও আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে আমরা সফল হবো। মাদক আন্তর্জাতিক সমস্যা। এটা নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। মাদক প্রবেশ রোধে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডকে শক্তিশালী করা হয়েছে।

ইয়াবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছি। নতুন আইন প্রনয়ণের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট কাজ করছে। কারাগারে বন্দিদের মধ্যে অধিকাংশই মাদক সংক্রান্ত মামলার আসামি। তারপরও এটা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। মাদকের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমাম, গণমাধ্যম, শিক্ষক, আলেম, সমাজসেবক, এনজিও, জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার হতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগে শুনুন, শিশু ও যুবাদের প্রতি মনোযোগ দেয়াই তাদের নিরাপদ বেড়ে উঠার প্রথম পদক্ষেপ’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দেশজুড়ে দিবসটি একযোগে পালিত হয়। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে সমাজের বন্ধন শিথিল হচ্ছে। শিশু ও যুবাদের প্রতি নজর দিন, তাদের কথা শুনুন ও তাদের সময় দিন। এসময় তিনি ঐশীর উদাহরণ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধন করে যুগোপযুগি করা হচ্ছে। এই আইনে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। মাদকের ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যস্ত হয়। ধর্মীয় অনুশাসন, আচার-আচারণ, পরিবাবারিক বন্ধন মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে। দেশের ৬৫ শতাংশ জনগণ কর্মক্ষম। তাদের কাজে লাগাতে না পারলে রূপকল্প অর্জন সম্ভব নয়। মাদক প্রবেশ রোধে কক্সবাজারকে বিশেষ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে।

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেত চৌধুরী বলেন, পাশ্চাত্য দেশে মাদক ব্যবহার সহনীয় কিন্তু আমাদের দেশে মাদক ব্যবহার অসহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ল’ইনফোর্সের গাফলতিতে মাদক আসামি জামিন বা পার পেয়ে যাচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মাদকের অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ অতিথি হিসেবে ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, মাদক ব্যবহারে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণে ইয়াবার সাজা মৃত্যুদণ্ড বিধান রেখে মাদকদ্রব্য আইনটি সংশোধনের উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান। দেশে ৭০ লাখ মাদকসেবি রয়েছে। ২০২০ সালে এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। যা আতঙ্কের বিষয়। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ যুবক। মাদক গড ফাদারদের আটকের ব্যবস্থা করতে হবে।

মাদকদ্রব্যে নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। কারাগারে মাদকসেবি আসামিদের জন্য কাউন্সিলিং সেল ও ডোপ টেস্ট গ্রহণের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে মাদক ব্যবহার কমে আসবে। মাদক জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা। মাদকের করুণ চিত্র তুলে ধরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন