শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নারী পকেটমার নূরী বেগমদের চাঞ্চল্যকর কাহিনী !

ভোরের সংলাপ ডট কম :
জুলাই ১, ২০১৭
news-image

বয়স আটাশ থেকে ত্রিশ হবে নূরী বেগমের। চেহারায় লাবণ্যতা এখনো কমেনি। ভোর হলেই বেরিয়ে পড়ে শহরের রাস্তায়। ব্যস্ত গলি, মার্কেট অথবা কোর্ট প্রাঙ্গণ তার বিচরণের জায়গা। তীক্ষ্ণ দুই চোখে খুঁজে ফেরে মানুষের পকেট, ভ্যানিটি ব্যাগ। সুযোগ পেলেই খুলে ফেলে ঘাড়ে ঝুলে থাকা ব্যাগের সবগুলো চেইন। কৌশলে হাতিয়ে নেয় টাকা, মোবাইল ফোন। পরিচিত লোকজন পকেটমার হিসেবেই চেনে তাকে। বাস করেন শহরের পকেটমার পল্লী উত্তর চেলোপাড়ায়। সংঘবদ্ধভাবেই এরা মাঠে কাজ করে। কখনো বিপদে পড়লে সমাজের কিছু প্রভাশালী ব্যক্তি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। তারাই তাদের নিয়ন্ত্রক। ওরা সর্দার বলে মানে। সর্দারদের সঙ্গে পুলিশের সখ্য বেশি থাকায় কখনো কোন পকেটমার ধরা পড়লে তাদের ছাড়িয়ে আনতে সবকিছুই করে থাকেন তারা। যাদেরকে পুলিশের কাছ থেকে মুক্ত করা যায় না তাদের কোর্ট থেকে মুক্ত করার যাবতীয় আয়োজনেও তাদের ভূমিকা বেশি। সর্দারদের পাশাপাশি এসব পকেটমারের বন্ধুর ভূমিকায় থাকে পুলিশ। পকেট কাটতে ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হলে তাদের মার এবং জীবন বাঁচাতে পুলিশ সবচেয়ে বেশি কাজ করে। জনসাধারণের হাত থেকে এদের রক্ষা করে দুই চারটি লাথি মেরে থানায় নিলেই তাদের ফাঁড়া কেটে যায়। তারপর দেন-দরবারের মাধ্যমে মুক্তি অথবা ১-২ মাসের জন্য জেল।
গতবছর ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের ব্যস্ততম সাতমাথা এলাকায় এক মহিলার ভ্যানিটি ব্যাগে আঙুল চালানোর সময় ধরা পড়ে নূরী বেগম। শুরু হয় গণপিটুনি। কিছুক্ষণের পৃষ্ঠা ৫ কলাম ১

মধ্যেই তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন কর্তব্যরত পুলিশ। জনরোষানলের হাত থেকে রক্ষা করে তাকে ধরে নিয়ে যায় সদর থানায়। এই সময়েই তার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়। নূরী বেগম বগুড়ার নিউমার্কেট, সাতমাথা এবং কোর্ট এলাকায় নিয়মিত পকেটকাটার কাজ করে। তাকে সহযোগিতা করে তার টিমের আরো ৬-৭ জন কিশোরী ও মহিলা। মোট আট জনের এই টিমের লিডার সে। সারাদিনে অন্যের পকেট থেকে তুলে আনা টাকা ভাগ হয় রাত ১১টার পরে। মোট টাকার অর্ধেক নিজে নিয়ে বাকি টাকা অন্যদের সমান করে ভাগ করে দেয় নিজ হাতে। সবদিনেই কাজ হয় এমনটি নয়। তবে সপ্তাহে দুই-তিনদিন কাজ হলেই ভালো চলে যায় নূরী বেগমদের। নূরী বেগম যখন ৭-৮ বছরের শিশু তখন থেকেই সে পকেটকাটার কাজে জড়িয়ে পড়ে। এখন সে একাজের বিশ বছরের অভিজ্ঞ একজন কৌশলী পকেটমার। পকেটকাটাকে সে পেশা হিসেবেই দেখে। নারী, পুরুষ, কিশোর, কিশোরী সব মিলে পকেটমারের সংখ্যা তিন শতাধিক হবে বলে জানায় নূরী বেগম। পকেটকাটার অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মাঝে-মধ্যে গ্রেপ্তার হলে ১-২ মাসের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে আবারো মাঠে নামে তারা। নূরী বেগম এখন জেলের বাইরে। শহরের অলিগলি, মার্কেটেই এখন তার বিচরণ। কারণ ঈদ সমিনে। কেনাকাটায় উপচেপড়া ভিড় মার্কেটগুলোতে। এখনিতো মুখ্য সময় তাদের। নূরী বেগমদের এখন সিজন টাইম।
উৎসঃ মানব জমিন

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন