শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নওগাঁয় জনপ্রিয় হচ্ছে কীটনাশক ফাঁদ

ভোরের সংলাপ ডট কম :
জুন ২৪, ২০১৭
news-image

নওগাঁয় প্রথম পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পোকামাকড় নিধনে সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ (কীটনাশক ফাঁদ) ব্যবহার করে আম চাষ করা হচ্ছে। জেলার সাপাহার উপজেলায় দুই আম চাষী পরীক্ষামূলক ভাবে কোনো ধরনের কীটনাশক ছাড়াই জৈবিক পদ্ধতিতে আম চাষ শুরু করেছেন। এ পদ্ধতিতে সুবিধা পেলে কীটনাশক ফাঁদের ব্যবহার আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ বা কীটনাশক ফাঁদ একটি পরিবেশবান্ধব জৈবিক পদ্ধতি।

এ পদ্ধতিতে মূলত ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমন করা হয়। ফলে রক্ষা পায় ফসল ও পরিবেশের জন্য উপকারী পোকামাকড়। বাগানে বা ফসলের মধ্যে একটি বাঁশের লাঠির মাথায় বা দুটি খুঁটির মাঝে একটি মুখ কাটা কৌটা শক্ত করে বাধা থাকে। কৌটার মধ্যে সুতা দিয়ে বেঁধে ঝোলানো হয় সেক্স ফেরোমন লিওর। কৌটার তলায় থাকে পানি ও সাবানের ফেনা। ফেরোমন লিওরের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ পোকা ও মাছি কৌটার মধ্যে সাবান-পানি মিশ্রণের মধ্যে পড়ে মারা যায়। এতে অন্য কোনো পোকা আকৃষ্ট হয় না। মূলত ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড়ের গায়ের গন্ধ আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করে ফেরোমন লিওর তৈরি করা হয়।

ফোরোমন লিওরে থাকে ক্ষতিকর স্ত্রী পোকার গায়ের গন্ধ। এতে ওই জাতের পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে ট্র্যাপে পড়ে মারা যায় এবং ক্ষতিকর পোকাগুলোর বংশ বিস্তার হয় না। ফলে ফসল বা আম রক্ষা পায়। পোকা-মাছি দমনে বিষমুক্ত আম চাষের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে দুই আম চাষীকে ৪০ সেট সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ বিনামূল্যে দেয়া হয়। সেক্স ফেরোমন ট্রাপ বা জৈব পদ্ধতিতে মাছি ও পোকা দমন করে উৎপাদিত আমে রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার না হওয়ায় খরচও কমেছে।

উপজেলার মানিককুড়া গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, আম বাগানে এ বছর নতুন এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। আট বিঘা আম বাগানে আম্রপালি, খিরশাপাত ও নখলা জাতের আম আছে। প্রায় এক বিঘাতে ২০টি কীটনাশক বক্স ব্যবহার করেছেন। তবে সুফল তেমন বুঝতে না পেলেও বাগানে পোকা মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়নি বলে জানান।

উপজেলার তিলনা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, তিন বিঘা জমিতে আম্রপালি, মল্লিকা ও বারি-৪ জাতের আমের চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে পাওয়া ২০টি কীটনাশক বক্স ব্যবহার করেছেন। আমের ক্ষতিকর মাছি ও পোকা-মাকড় কীটনাশক বাক্সের মধ্যে পড়ে মারা যায়। প্রতি সপ্তাহে বাক্সটি পরিষ্কার করতে হয়।
এ পদ্ধতি ব্যবহারে আমে তেমন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। কীটনাশক খরচও কমে গেছে। বাজারে যদি এ বাক্সটি পাওয়া যায় তবে আগামী বছর ১৩/১৪ বিঘা জমিতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন বলেও জানান তিনি।

সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক হোসেন বলেন, সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করে পোকা দমন করা হচ্ছে। বাক্সে একটি ট্যাবলেট থাকে। যেখান স্ত্রী পোকার ফ্লেভার দেয়া আছে। পুরুষ পোকা সেটির আকর্ষনে পাত্রে প্রবেশ করে মারা যায়। ফলে পুরুষ পোকা আমে হোল ফোটাতে পারে না। আম রক্ষা পায় ও ভাল থাকে। এ উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। কীটনাশকমুক্ত আম ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের দেশে রপ্তানি করা হবে।

তিনি আরো বলেন, এটি শুধু আমে নয়। সবজির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে। এটি ব্যবহারে কীটনাশকমুক্ত সবজি পাওয়া সম্ভব। সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে এর ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক জানান, কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দিতে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ পোকামাকড় দমন করতে তেমনি একটি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। আগামীতে এটি কৃষকদেরকে পোকামাকড় দমনে বিষাক্ত রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার করা থেকে অনেক দূরে রাখবে। এতে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে। পরিবর্তন

bhorersanglap