বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কাশ্মীরে রক্তপাত চলছেই

ভোরের সংলাপ ডট কম :
জুন ২৪, ২০১৭
news-image

পবিত্র রমজানেও ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে রক্তপাত চলছেই। ভারতীয় বাহিনীর অভিযানে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ভোররাতে ভারতীয় সেনারা গুলি করে তিন কাশ্মীরি তরুনকে হত্যা করে। দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার কাকাপোরা এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এসব তরুন লস্কর-ই-তাইবার স্থানীয় সদস্য বলে নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করে।

ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলওয়ামা এলাকায় এটা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রথম সফল অভিযান। ওই এলাকায় স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। এদের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের শক্তিশালি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক রয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি), ১৮৩ সিআরপিএফ ব্যাটলিয়ন ও ৫০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ওই অভিযান চালায় বলে পত্রিকার খবরে উল্লেখ করা হয়।
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মীর উপত্যাকায় ভারত শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে। রমজান মাস শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়।
গত সপ্তাহান্তে নিহত হয় ১১ ব্যক্তি। এদের মধ্যে, অনন্তনাগ জেলায় পুলিশ ভ্যানে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছয় পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে কয়েকটি আলাদা বন্দুকযুদ্ধে তিন স্বাধীনতাকামী ও দুই বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।
১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসন অবসানের পর থেকে কাশ্মীর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। দু’টি দেশই পুরো ভূখণ্ডের দাবিদার।
কাশ্মীরে রমাজানের সূচনা ঘটে স্বাধীনতাকামী নেতা সাবজার ভাটকে হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভের ওপর সেনাবাহিনী গুলিতে এক তরুনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ওই ঘটনার জের ধরে বেশ কয়েকদিন উপত্যকায় কারফিউ চলে। রাজ্যে ইন্টারনের সেবা বিচ্ছিন্ন ও শাহী মসজিদ মুসল্লিদের নামাজ আদায় বন্ধ করে দেয়া হয়।
গত ১৪ জুন স্বাধীনতাকামীরা একযোগে কয়েকটি জায়গায় সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালায় এতে নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩ সদস্য আহত হয়।
এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা অভিযান শুরু করলে স্বাধীনতাকামীদের পালানোর সুযোগ করে দিতে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।
গত ১৬ জুন নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে স্বাধীনতাকামী জুনাইদ মাতু নিহত হয়। এর জেরে নিহতের নিজ শহর কুলগামে কর্তৃপক্ষ কারফিউ জারি করে। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করে মাতুর জানাযায় অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ।
কাশ্মীরের বর্তমান ডেমক্রেটিক ফ্রিডম পার্টি (ডিএফপি)’র চেয়ারম্যান শাবির আহমদ বলেন, ভারতীয় নেতৃত্ব কাশ্মীরকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় নেতৃবৃন্দ গোয়ার্তুমি করছে এবং এই অঞ্চলকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’
উপত্যকাজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে শাহ বলেন, এই পবিত্র রমজান মাসেও ভারতীয় বাহিনী যেভাবে নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে তা দুঃখজনক।
অন্যদিকে, কাশ্মীরের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা মিরওয়াজ ওমর ফারুক বলেন, রমজান মাসে আগে কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি। আর কতদিন ভারত সরকার কাশ্মীরের বাস্তবতা অস্বীকার করে চলবে – সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।
গত বছর ৮ জুলাই ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরের জনপ্রিয় স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহান ওয়ানিকে হত্যার পর থেকে দিল্লি’র শাসনের বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মীর উত্তাল হয়ে আছে। তখন থেকে একের পর এক বিক্ষোভ ও রক্তপাত চলছে গোটা উপত্যকায়।

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন