মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ধনপতি যখন ভ্যানচালক

ভোরের সংলাপ ডট কম :
মে ২২, ২০১৭
news-image

‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’- প্রবাদটি সবাই জানি। সেটা মূলত নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আমাদের সমাজের জনমদুঃখি মেয়েটার নাম ‘সুখী’ অথবা জীবনযুদ্ধে ব্যর্থ ছেলেটির নাম ‘আনন্দ’। এমন নামের বাহারে আসল মানেই হয়তো আমরা ভুলে যাই। ভুলে যাই কী তার পরিচয়।

যার ধন আছে সে-ই তো ধনপতি। কিন্তু এমন একজন ধনপতিও আছেন যার ধন নেই। তেমনই এক ধনপতির কথা বলবো আজ। ধন নেই তার, তবুুও তিনি ধনপতি কীভাবে হলেন? আসুন জেনে নেই ধনপতি হওয়ার গল্প।
কে এই ধনপতি? এমন প্রশ্ন যদি মনে আসে, তাহলে বলব- পেশায় তিনি ভ্যানচালক। তবুও সবাই তাকে ধনপতি বলেই ডাকে। কারণ তার নামই ‘ধনপতি’। হয়তো বাবা-মা ইচ্ছা করে বা না বুঝেই নামটি রেখেছিলেন। বাবা-মায়ের আদরের সেই ছোট্ট ধনপতি যৌবনে এসে ঢাকা শহরের এক ভ্যানচালক।

ধনপতি ২০০৩ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর পারিবারিক দৈন্যদশায় আর পড়া হয়নি। দুই ভাই-এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। পরিবারের বড় বলেই সংসারের হাল ধরতে হয়। নিজে পড়াশোনা না করলেও ছোট ভাই-বোনকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। ভাইটি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বোনটাও নিয়মিত স্কুলে যায়।

কর্মজীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ধনপতি দুই কন্যা সন্তানের বাবা। তার বড় মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ধনপতির উপার্জনে চলা পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে থাকেন। তিনি একা থাকেন রাজধানীর উত্তর বাড্ডার সাতারকুলে।

ধনপতির একটি ভ্যান রয়েছে। সেই ভ্যানে তিনি বিভিন্ন ফার্নিচার কারখানার মালামাল বহন করেন। মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে বাড়ি পাল্টানোর মালামাল বহন করে থাকেন। দিনশেষে তিনি একটি ফার্নিচার কারখানায় রাত কাটান। সকাল হলেই বেরিয়ে পড়েন মালামাল নিয়ে। একটু অবসর পেলে শিখতে থাকেন ফার্নিচারের কাজ।

কাজপাগল ধনপতি আবার গল্পপাগলও বটে। মালামাল নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে মালামালের মালিকের সঙ্গে সহজেই ভাব জমাতে পারেন। জীবনের গল্প বলেন। সবসময় হাসিমুখেই থাকেন। পরিচিতদের কাছ থেকে দর কষাকষি করে ভাড়া নেন না। কর্তা খুশি হয়ে যা দেন, তা-ই নেন। টাকা গুনেও দেখেন না।

আপনার নাম কেন ধনপতি এমন প্রশ্নে হেসে ওঠেন তিনি। বলেন, ‘জন্মের পরে বাবা-মা রাখছে। ধনপতির মানেই হয়তো তারা বোঝে নাই।’

সত্যিকারের ধনপতি হওয়ার ইচ্ছা আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কার ইচ্ছা নাই বলেন? চেষ্টা তো করতাছি। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়?’

ধনপতি প্রতিদিন ভালোই উপার্জন করছেন। বাড্ডা থেকে পান্থপথ একবার মালামাল নিয়ে গেলে ৪শ’ টাকা পান। উত্তরা গেলে পান ৬শ’ টাকা। দৈনিক আয় মোটামুটি ভালোই। ফলে মাসিক খরচের পরে কিছু টাকা জমাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

কোটিপতি, লাখপতি বা ধনপতি যা-ই নাম হোক না কেন। কাজই আসল পরিচয়। কাজেই মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। নিজের ভাগ্য নিজেকেই বদলাতে হয়। তবুও ধনপতি তার নামের ডাক শুনেও যদি পুলকিত হয় তাতে মন্দ কী?

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন