শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রোহিঙ্গা সমাধানে সাহাবিদের আদর্শ

ভোরের সংলাপ ডট কম :
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭
news-image

‘যারা মুহাজিরদের আগমনের আগে মদিনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে, মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদের অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।’

সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করা আমাদের কর্তব্য। কেননা তারা আল্লাহর হুকুম ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নত পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করেছিলেন। যারা সাহাবিদের অনুসরণ করেন আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাদের জন্য চিরসুখময় জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অগ্রগামী মুহাজিররা ও আনছাররা এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সেসব লোকের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন এমন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণগুলো। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হলো মহান কৃতকার্যতা।’ (সূরা তওবা : ১০০)।

আর যারা সাহাবায়ে কেরামদের আদর্শ অনুসরণ না করে নফসের কামনা-বাসনা অনুযায়ী চলে, তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মোমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ওই দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।’ (সূরা নিসা : ১১৫)। আয়াতে উল্লিখিত মোমিনদের অনুসৃত পথ বলতে কয়েকজন তাফসিরকারের মতে, সাহাবাদের অনুসৃত পথকে বোঝানো হয়েছে। আয়াতের মর্ম হচ্ছে, সত্য দ্বীন ইসলামের সত্যতা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরও যারা রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুসরণ না করে বরং তাদের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাসস্থল জাহান্নাম। মিয়ানমারের বৌদ্ধদের দ্বারা নির্যাতিত অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যের ব্যাপারে আমাদের সাহাবায়ে কেরামদের আদর্শ অনুসরণ করা উচিত। এতে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা ছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব।
মক্কার মুসলমানরা যখন কাফের-মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মদিনায় হিজরত করেন, তখন মদিনার মুসলমানরা তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। মক্কার মুহাজিরদের প্রতি মদিনার আনসারদের বিন্দুমাত্র হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না, বরং হৃদয় দিয়ে তারা পরস্পরকে ভালোবাসতেন। তারা নিজের প্রয়োজনের চেয়ে মক্কার নির্যাতিত অসহায় মুসলমানদের প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করতেন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুহাজিরদের আগমনের আগে মদিনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে, মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদের অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।’ (সূরা হাশর : ৯)।
মদিনার আনসার মুসলমানরা মুহাজির সাহাবিদের আশ্রয় দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন এবং জালেম, কাফের ও বেঈমানদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত যে মক্কা থেকে মুসলমানদের বের করে দেয়া হয়েছিল তা তারা জয় করেন। মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা ও অস্ত্রশস্ত্র কাফেরদের চেয়ে অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও প্রায় প্রতিটি যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয় লাভ করেন। কারণ তাদের মজবুত ঈমানি শক্তি ছিল। ঈমানি শক্তির বলে মুসলমানরা তাদের কয়েকগুণ বেশি শত্রুবাহিনীর ওপর জয়লাভ করতে পারে। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, আপনি মুসলমানদের উৎসাহিত করুন জিহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি ২০ জন ঈমানদার দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে ২০০-এর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে ১০০ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের ওপর থেকে, তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন।’ (সূরা আনফাল : ৬৫)।
মদিনার আনসার সাহাবিদের মতোই রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান এবং সার্বিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। এর  পাশাপাশি জালেম বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে বা সন্ধি করে যেভাবেই হোক রোহিঙ্গা মুসলমানদের আবাসভূমি তাদের জন্য নিরাপদ করা জরুরি। এভাবে সাহাবিদের অনুসৃত পথেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের সমস্যার সমাধান সম্ভব।

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন