শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভয়মুক্ত নির্বাচন করার তাগিদ

ভোরের সংলাপ ডট কম :
আগস্ট ১, ২০১৭
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক : সহায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সবার আস্থা অর্জন ও নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ইসিকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সোমবার সকালে নির্বাচন কমিশন ভবনে ইসির সঙ্গে সংলাপে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ভয়মুক্ত ও সবার অংশগ্রহণমূলক করার তাগিদ দেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে এ সংলাপ হয়। এতে অন্তত ৩০ জন বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নেন। সংলাপ শেষে তাদের অনেকেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত অলিউর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় মূল ফোকাসটা দেওয়া হয়েছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর। আমরা যেন সবার অংশগ্রহণে ভোট দেখতে পাই। সহায়ক সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অনেকে বলেছে, তত্ত্বাধায়ক সরকার আনা হোক। আমরা বলছি, এটা আনা সম্ভব না, এটা ডেড ইস্যু। আর্মি নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে। আমরা বলেছি, তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া ঠিক হবে না। আর্মিকে ভোটে আনার দরকার নাই। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার কথা তুলেছে অনেকে। আমরা বলেছি, ভেঙে দেওয়া যাবে না।’

অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘ভোটের সময় সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারলেই জনগণ সন্তুষ্ট থাকবে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করার কথা এলেও তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ার কথা ওঠেনি। ইসি সঠিকভাবে কাজ করলে কোনো রাজনৈতিক দলই তাদের পছন্দ করবে না। তবে জনগণকে তারা পাশে পাবে।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে সুপার পলিটিক্যাল ইভেন্ট। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দলগুলো ফল ঘরে তোলে। এখনকার সংকট দূর করে নির্বাচনী কৌশলে আসতে হবে।’

প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সব দলকে ভোটে আনতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে আইনে ঘাটতি থাকলে তার ব্যবস্থা নেবেন। নাগরিক প্রতিনিধিরা সঙ্গে থাকবেন।’

আগামীতে ১ কোটি প্রবাসী নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইসিকে জনগণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। দৃঢ় স্বাধীন ভূমিকা নিয়ে মানুষের কাছে দৃশ্যমান করতে হবে এবং তা প্রমাণ করতে হবে। নির্বাচনী আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন কীভাবে নিরপেক্ষ থাকবে এবং তাদের নিরপেক্ষ রাখতে ইসি কীভাবে ভূমিকা রাখবে, তা দেখতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার আগে ইসির করার কিছু নেই- এমন বক্তব্যকে আমরা অনেকে গ্রহণ করিনি। এখন থেকে ইসির অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। ধর্মকে নির্বাচনী প্রচারে কোনোভাবেই নেওয়া যাবে না। না ভোট চালুর বিষয়ে ব্যাপক ঐক্যমত রয়েছে। সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে রাখতে হবে। পাশাপাশি এ দুটো বিষয়ে ভিন্নমতও এসেছে আলোচনায়। নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনতে আরো বেশি স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা রাখতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা আইন করতে হবে।’

‘নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসির বন্ধু রাজনৈতিক দল নয়। ইসির বন্ধু হলো জনগণ, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া ও আইন-আদালত। নির্বাচনকালীন-নির্বাচনোত্তর সহিংসতা রোধের ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে,’ বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সবাই খোলামেলা মত দিয়েছেন। অনেক বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে। নিকট অতীতে দেখেছি, ইসি নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগে অনীহা দেখিয়েছে। যেটা সুষ্ঠু নির্বাচন অর্জনে কাজে দেয়নি। ইসি নিজে যেন সক্রিয় হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা লিখিত মতামতও দিচ্ছি। রিটার্নিং অফিসারের নিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্ব বিষয়। এক্ষেত্রে নিজস্ব লোকও হতে পারে; অথবা ইসির চিহ্নিত জেলা প্রশাসকও হতে পারে। এ কর্মকর্তা নিয়োগেও সক্রিয় থাকতে হবে।’

bhorersanglap