বুধবার, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১০ দিনের মধ্যে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু: টেরিজা মে

ভোরের সংলাপ ডট কম :
জুন ১০, ২০১৭
news-image

ডেস্ক রিপোর্ট: একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি)-কে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ নেত্রী টেরিজা মে। সেই সঙ্গে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচনে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন এবং নতুন সরকার গঠনের ১০ দিনের মধ্যেই ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু হবে।

পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী ১৯ জুনের মধ্যে এ আলোচনা শুরুর কথা ছিল। তবে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের কারণে এটি পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার টেরিজা মে নিশ্চিত করেন, পূর্বনির্ধারিত সময়েই এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ৩২৬টি আসন জয়ে ব্যর্থ হওয়ায় কনজারভেটিভ পার্টি নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডিইউপি পার্টির সঙ্গে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনে দলটি ৩১৮টি আসন পেয়েছে এবং ডিউপি ১০টি আসনে জয়লাভ করেছে। ডিউপির ১০ জন এমপির সমর্থনে হাউস অব কমন্সে যে কোনও বিল পাস এবং সরকার গঠন করতে পারবেন মে।

নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দলের নেতা হিসেবে টেরিজা মে সরকার গঠনের অনুমতি চাইতে শুক্রবার বাকিংহাম প্যালেসে রানীর সঙ্গে দেখা করেন। রানীর অনুমতি পাওয়ার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটে ভাষণ দেন মে। ভাষণে তিনি বলেন, আমি এখন একটি সরকার গঠন করব। যে সরকার নিশ্চয়তা দেবে এবং সংকটময় এ সময়ে ব্রিটেনকে এগিয়ে নেবে।

নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি সর্বোচ্চ ভোট এবং এককভাবে সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়ার কথা ভাষণে উল্লেখ করেন টেরিজা মে। তিনি দাবি করেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে শুরু হওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রেক্সিট আলোচনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একমাত্র টোরিরাই দেশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার নিশ্চয়তা দিতে পারে।

মে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক্সিট আলোচনায় এই সরকার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার জন্য ব্রিটিশ জনগণের ইচ্ছা পূরণ করা হবে। আমরা আমাদের বন্ধু ও মিত্র, বিশেষ করে ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিকে নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখব। আমাদের একটি দেশ হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হতে সহযোগিতা প্রয়োজন। এটা দেশের সবার জন্য, সফল ব্রেক্সিট চুক্তির জন্য শক্তির সঞ্চার করবে। এখন কাজ শুরু করতে হবে।

নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে কনজারভেটিভরা ব্যর্থ হওয়ার ফলে টেরিজা মে-র নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সময় মে জানিয়েছিলেন, ব্রেক্সিট আলোচনায় যুক্তরাজ্য সরকারকে আরও শক্তিশালী করতেই এই নির্বাচন। ২০১৫ সালের তুলনায় পার্লামেন্টে আরও বেশি আসন পাবে তার দল। ২০১৫ সালে ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বে দলটি ৩৩১টি আসনে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু আগাম নির্বাচনে টেরিজার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ৩২৬ আসন পেতেই ব্যর্থ হয়।

নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে জরিপে যে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছিল, ভোটের ফলে সে তুলনায় অনেক ভালো করেছে জেরেমি করবিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আসন কনজারভেটিভদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন লেবার এমপিরা। ২৬১টি আসনে জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। ২০১৫ সালের তুলনায় এবার ২৯টি আসন বেশি পেয়েছে দলটি। নিজ আসনে জয়লাভের পর দেওয়া ভাষণে জেরেমি করবিন থেরেসা মে-কে পদত্যাগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তার দল দেশকে সেবা দিতে প্রস্তুত।

আগাম নির্বাচনের ফলকে ব্রেক্সিট ম্যান্ডেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ ব্রেক্সিট বিরোধী আসনগুলোতে ভোটাররা কনজারভেটিভদের তুলনায় লেবার পার্টির এমপিদের ভোট দিয়েছেন। যা ব্রেক্সিট ইস্যুতে জনগণের অবস্থান নমনীয় হওয়ার কথা প্রমাণ করছে।

লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা টিম ফ্যারন বলেন, যদি ‘এক বিন্দু আত্মসম্মানবোধ থাকে তাহলে টেরিজা মে-র লজ্জিত ও পদত্যাগ করা উচিত।’

কনজারভেটিভদের সঙ্গে কাজ করার কথা ঘোষণা করেছেন ডিইউপি নেতা আরলিন ফোস্টার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, সকালে টেরিজা মে’র সঙ্গে তার কথা হয়েছে। দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কনজারভেটিভ ও ডিইউপি আগ্রহী।

আগাম নির্বাচনের ফল জনমত জরিপকে পাল্টে দিয়েছে। বেশিরভাগ জনমত জরিপে দাবি করা হয়েছিল, কনজারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। গত ২৫ বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে এবার। ৪ কোটি ৬৯ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ৩ কোটি ২০ লাখ ভোট দিয়েছেন। শতকরা হিসেবে তা ৬৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
সূত্র: ঢাকা টাইমস

bhorersanglap