পুরো রমজান যেন মিশরীয়দের কাছে ঈদ
![news-image](https://bhorersanglap.com/wp-content/uploads/2022/04/রমজান-উপলক্ষে-মিশরীয়দের-প্রস্তুতি-696x402-1.jpg)
পিরামিড, নীলনদ আর তুর পাহাড়ের দেশ মিশর।পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষে বাড়ি, রাস্তা-ঘাট সাজানো হচ্ছে ফানুস, নিশান আর রং-বেরংয়ের বাতি দিয়ে। রাজধানী কায়রোসহ সারাদেশের সুপারশপ থেকে শুরু করে অলিগলিতে নিত্যপণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
গত দুই বছর করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশটিতে রোজা রাখা ছাড়া তেমন কিছু চোখে পড়েনি। অন্যান্য মুসলিম দেশের মতোই ইবাদতের জন্য মসজিদগুলো বন্ধ বা সীমিত আকারে খোলা ছিল। শাফি মাজহাবের অনুসারী মিশরে সাধারণত রমজান মাসে মসজিদগুলো এবাদতের জন্য সারারাত খোলা থাকে।
রমজানের প্রথম দশ দিন শুধু তারাবির নামাজ আদায় করলেও তারপর থেকে প্রতিটি মসজিদে জামাতের সহিত ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষরা আদায় করেন তাহাজ্জুদের নামাজ। মসজিদেই তাহাজ্জুদের নামাজে পবিত্র কোরআনের এক-দুই এমনকি তিন খতম দিয়ে শেষ করেন বিশ কিংবা পনেরটি রোজার রাত।
রমজানে সাধারণত মিশরীয়রা রাতে ঘুমান না। ইফতারের পরপরই জেগে ওঠে পুরো শহর। ইফতারের দেড় ঘণ্টা পর শুরু হয় তারাবির নামাজ। প্রায় সব মসজিদেই খতমে তারাবির মাধ্যমে নামাজ আদায় করেন নারী-পুরুষরা। এদেশে আট রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা আর তাতে সময় নেয় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।
পুরো রমজান মাসেই মিশরীয়দের কাছে যেন ঈদ। এবাদতের জন্য মসজিদগুলো যেমন পূর্ণ থাকে অন্যদিকে শহরের রাস্তার আশপাশের শিশার (হুক্কা) ক্যাফেটেরিয়াগুলোও থাকে পরিপূর্ণ। দুমিনো ও তাওলা (লুডো) খেলে ও টিভি দেখে পার করে সারারাত। ফজরের নামাজ আদায়ের পর ঘুমাতে যান বেশিরভাগ মিশরীয়।
ফেরাউনের দেশ মিশরে কামানের গোলার শব্দে শুরু করা হয় ইফতার। দুপুরের পরই অলিগলিতে বসে মায়িদাতুর রহমান ইফতারির পসরা। সাধারণত খেজুর ও খুশাফ নামের পানীয় দিয়ে রোজা ভাঙা হলেও বিভিন্ন ফলের নির্যাস, সুবিয়ান, কারকাদে ও চা পানের মাধ্যমে ইফতার শুরু করেন মিশরীয়রা।
আর ইফতারের প্রধান খাবারে থাকে মুলুকাইয়া (পাটশাকের স্যুপ) মাহসি, ফাততাত লাহমা, ফাততাত কাউয়ারা, সালাতা বেলাদি, মুখাললেল ও তুরসি (বিভিন্ন পদের আচার)। আর মিষ্টির মধ্যে থাকে রোজ বি লাবান (ফায়েশ) কোনাফা, বসবুসা, আতাইফ, বালাহ শেমা, অম্মু আলি ইত্যাদি। সেহরিতে থাকে সাধারণ খাবার এইশ (রুটি), ফুল (ফাভা বিনস), তমাইয়া ও জাবাদি (টক দই) ইত্যাদি।
পারস্পরিক সম্পর্ক ধরে রাখতে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীদের বাসায় ইফতার করার রেওয়াজ রয়েছে মিশরে। তবে তরুণ-তরুণীদের পছন্দ বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ক্যাফেটেরিয়া বা রেস্তোরাঁ। আর তাদের আকৃষ্ট করতে পাঁচতারকা হোটেলগুলোতেও রমজানে ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসরা সাজানো হয়।
মিশরজুড়েই রাস্তায় বা অলি-গলিতে তাঁবু টানানো থাকে। (মায়িদিতুর রহমান) আশপাশের গরিব ও পথচারীদের ইফতার করান সমাজের বিত্তবান পরিবার ও মানবিক সংগঠনগুলো। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে পথচারীদের ইফতার করানোও মিশরীয়দের ঐতিহ্য।
![bhorersanglap](https://bhorersanglap.com/wp-content/uploads/2023/10/CROPATRO-scaled.jpg)