শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জীবনযুদ্ধে অদম্য নাটোরের রেহানা বুবু

ভোরের সংলাপ ডট কম :
মে ২২, ২০১৭
news-image

জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনের শহর নাটোর থেকে ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে বাগাতিপাড়া উপজেলা। পিচঢালা পথ বেয়ে চলতে গিয়ে উপজেলা পরিষদের দেড় কিলোমিটার দূরে চোখে পড়বে বিহারকোল বাজার।

বাগাতিপাড়া পৌরসভার অন্তর্গত পদ্মার শাখা বড়াল নদের তীরে অবস্থিত বাজারটি। অদূরে জমিদার গিরিশ রায়ের ঐতিহাসিক বাড়ি। বাজারের সাথেই গালিমপুর ব্রিজ। ব্রিজে উঠতেই দেখা মেলে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। দোকানে চা বানাচ্ছেন মধ্যবয়সি এক নারী। নাম রেহানা। সবাই ডাকে রেহানা বুবু। বয়স ৫৫। চোখের নিচে কাল দাগ, কুচকে গেছে শরীরের চামড়া। কপালে বলি রেখা। দেখলেই মনে হয় জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত এক নারী।

চা পান করতে গিয়ে কথা হয় রেহেনার সঙ্গে। তিনি জানালেন তাঁর জীবন সংগ্রামের কাহিনী। সহায় সম্বলহীন রেহানাকে শিশুকাল থেকেই নামতে হয় জীবনযুদ্ধে। অভাব অনটনের সংসার বাবার। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়ালেখা হয়নি। মামা কালু প্রামাণিকের সংসারে সহযোগিতা করার সুবাদে আশ্রয় মেলে তাঁর বাড়িতে। স্বামী সংসার সর্ম্পকে কিছু বোঝার আগেই পার্শ্ববর্তী আরেক সহায় সম্বলহীন সবজি ব্যবসায়ী কাদেরের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। রেহেনার কোলজুড়ে আসে পরপর দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে। সংসারের প্রতি উদাসীন স্বামী কাদের ও সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা রেহানা কাজের সন্ধানে ছুটে যান এখানে সেখানে। হঠাৎ পরিচয় হয় উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক কর্মকর্তা আপার সঙ্গে, মিলে যায় রেহানার কাজের সুযোগ।

১৫০০ টাকা বেতনে ব্র্যাকে শুরু হয় রেহানার নতুন জীবন। ব্র্যাক অফিসেই চা বানানোর হাতিখড়ি হয় তাঁর। স্বচ্ছলতা ফিরতে শুরু করে তাঁর সংসারে। চাকরিরত অবস্থায় তিন সন্তানকে বিয়েও দেন রেহানা। ছয় বছর চাকরি করার পর পারিবারিক কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তাঁর জীবনে আবারও নেমে আসে অন্ধকার। এ সময় জমানো কিছু টাকা দিয়ে শুরু করেন বিহাড়কোল বাজারে চায়ের দোকান। তিনি একাই দোকান চালান। মাঝেমধ্যে তাঁকে সহযোগিতা করেন তাঁর স্বামী ও ছেলে। সহজ সরল রেহানার আচরণে মুগ্ধ অনেকে সুযোগ পেলেই এক কাপ চা পান করতে বাজারে আসে। চায়ের দোকান সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত; আবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

প্রতিদিন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কাপ চা বিক্রি করেন রেহানা। তাতে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে তাঁর সংসার। চাকরি ছাড়ার পর এভাবে চলছে প্রায় ১০ বছর। চা বিক্রি করে তিনি এক টুকরো বাড়ি করার মতো জায়গাও কিনেছেন। সেখানে তিন কক্ষের একটি আধাপাকা বাড়িও নির্মাণ করেছেন। নারী হয়েও জীবনযুদ্ধে এভাবে অদম্য রেহানা এগিয়ে চলেছেন একটি সুন্দর স্বপ্নপূরণের দিকে।

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন