বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রতিবাদের ঝড়ে বেসামাল রাজধানী

ভোরের সংলাপ ডট কম :
ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
news-image

সকালে লালকেল্লা, রাতে যন্তরমন্তর। নাগরিকত্ব আ‌ইন ও এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে বৃহস্পতিবার কার্যত বিক্ষোভ নগরীতে পরিণত হল রাজধানী দিল্লি। সকালে লালকেল্লা থেকে মান্ডি হাউস, হাজার হাজার প্রতিবাদকারী ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাস্তায় নেমে পুলিশের হাতে আটক হন। মেট্রো বন্ধ, ইন্টারনেট বন্ধ, মোবাইল পরিষেবা বন্ধ। দিনভর অবরুদ্ধ শহর। যন্তরমন্তরে ছাত্রছাত্রীদের স্লোগানে গলা মেলালেন অরুন্ধতী রায় থেকে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপকরাও। আজ দিনভর দিল্লির আন্দোলন প্রবল চাপে ফেলেছে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে। কারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন ক্রমেই গণআন্দোলনে পরিণত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে মুম্বইয়ের আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে জনসমুদ্র। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই, নেমে এলেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তারকারাও। বেঙ্গালুরুতে মহাত্মা গান্ধীর পোস্টার হাতে মিছিলে নামা ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে টেনেহিঁচড়ে আটক করে তোলা হল পুলিশ ভ্যানে। বারাণসী থেকে পাটনা। মেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই। কলকাতা থেকে পাটনা। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির প্রতিবাদে দেশজুড়ে আন্দোলনে রীতিমতো বেসামাল মোদি সরকার।
দিল্লির বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে এই গণআন্দোলনের রূপ দেখে বিজেপির ভীত হওয়ার কারণ একটাই। আজ যে ভাবে দিল্লির রাস্তায় এবং যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ আছড়ে পড়েছে, সেই দৃশ্য অবিকল আট বছর আগের আন্না হাজারের আন্দোলনকেই মনে করাচ্ছে। দুর্নীতির প্রতিবাদে এভাবেই আন্দোলন হয়েছিল দিল্লিতে। টার্গেট ছিল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। হুবহু সেই ফরম্যাটেই জাতীয় পতাকা নিয়ে ছাত্র যুবদের নেতৃত্বে এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের ছবি দেখা যাচ্ছে দিল্লিতে। এবার নিশানায় মোদি সরকার। আর মাত্র দেড় মাস পরই দিল্লিতে বিধানসভা ভোট। ইতিমধ্যেই সেই ভোটপ্রচার শুরু হয়েছে। কিন্তু ৩৭০ থেকে রামমন্দির, যাবতীয় ইস্যুকে ছাপিয়ে আচমকা এই নাগরিকত্ব আইনই প্রতিবাদ ও চর্চার ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমানা ছাড়িয়ে আজ লালকেল্লা থেকে এবং মান্ডি হাউস পর্যন্ত দুটি পৃথক প্রতিবাদ মিছিল যাওয়ার কথা ছিল শহিদ পার্কে। দিল্লি পুলিশ অনুমোদন দেয়নি। উল্টে ১৪৪ ধারা জারি করে সব সমাবেশকে বেআইনি ঘোষণা করে দেয়। এরপরই প্রতিবাদকারীরা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ততক্ষণে একে একে ২০টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একাধিক এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ দেওয়া হয়। রুট মার্চ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। মিছিল করা যাবে না কেন এই প্রশ্ন তুলে রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়।
দিল্লির বিস্তীর্ণ অংশ সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। দলে দলে আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ। এরপর যন্তরমন্তরে চলে আসে বিক্ষোভকারী জনতা। শুরু হয় নতুন করে বিক্ষোভ ও ধর্না। দিন যতই বেড়েছে সেখানে ভিড়ও বেড়েছে। পার্লামেন্ট স্ট্রিট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দিল্লির কেন্দ্রস্থল বস্তুত পুলিশ নগরীতে পরিণত হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দফায় দফায় বৈঠক করে নর্থ ব্লকে। স্বয়ং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পর্যালোচনায় নেমেছেন। রাজ্যগুলিকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হলে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হোক। দরকারে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হবে। বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বোঝাতে রাজি আছি। আন্দোলনকারীরা এই আইন না জেনে, না পড়েই বিভ্রান্ত হচ্ছেন।’ কিন্তু সেই ডাকে সাড়া দিয়ে কেউ আসেনি। একটাই দাবি ওঠে রাত পর্যন্ত, আইন প্রত্যাহার করতে হবে। প্রধান স্লোগান ছিল, ‘নো এনআরসি, সেভ ডেমোক্রেসি’।

সূত্র: বর্তমান

bhorersanglap