মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রামোসের কারণেই রিয়ালে যাননি নেইমার?

ভোরের সংলাপ ডট কম :
নভেম্বর ১৯, ২০১৮
news-image

স্মৃতির চাকায় চড়ে বছর খানেক আগে ফিরে যাওয়া যাক। গত বছরের এই সময়টাতেই ফুটবল দুনিয়ায় গনগনে গুঞ্জন, পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাচ্ছেন নেইমার। নভেম্বর-ডিসেম্বর পেরিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সেই গুঞ্জন উত্তাপ ছড়ায় আরও বেশি। রিয়ালের কর্তারা সরাসরি ব্রাজিলে গিয়ে নেইমারের বাবার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। এমনকি পিএসজির কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা। ব্রাজিলের পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, নেইমারও নাকি রিয়ালকে ‘হ্যাঁ’ বলে দেন।

কিন্তু সেই ‘হ্যাঁ’ শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। মত পাল্টে নেইমার বরং থেকে গেছেন পিএসজিতেই। কেন রিয়ালকে ‘হ্যাঁ’ বলেও যাননি নেইমার? কারণ হিসেবে এতোদিন জানা গেছে একটা বিষয়ই, পিএসজি তাকে বিক্রি করতে রাজি হয়নি। কিন্তু এবার জানা গেল অন্য একটা কারণও। আসলে নেইমার রিয়ালে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন সার্জিও রামোসের কারণে!

না, সরাসরি এমনটা বলা হয়নি যে, রামোসের কারণেই নেইমার রিয়ালে যাননি। তবে রিয়াল মাদ্রিদের মহাব্যবস্থাপক হোর্হে ভালদানো যা বললেন, তার অর্থ সেটাই। রিয়ালের এই আর্জেন্টাইন কর্তা স্পষ্ট করেই বলেছেন, রামোসের সঙ্গে খেলতে চান না নেইমার! তিনি এটাও বলেছেন, নেইমারকে আনতে হলে রামোসকে তাড়াতে হবে ক্লাব থেকে! রামোস থাকলে নেইমার আসবেন না।

রামোস বর্তমানে রিয়ালের অধিনায়ক। ভালদানোর দাবি, রামোসকে অধিনায়ক হিসেবেও মানতে নারাজ নেইমার। ব্রাজিলিয়ান তারকা বরং নিজেকেই দলের ‘নেতা’ হিসেবে দেখতে চান। হতে চান দলের ‘তারকা’।

বার্সেলোনায় ৪ বছর থাকাকালে অকেনবারই মাঠে রামোসের মুখোমুখি হয়েছেন নেইমার। কিন্তু তাদের সেই মুখোমুখি হওয়ার রেকর্ডটা সুখকর নয়। প্রতিপক্ষ হিসেবে এমনিতেই সুখকর হওয়ার কথা নয়। তবে বল দখলের লড়াইয়ে নেমে নেইমারের সঙ্গে রামোসের বেধেও গেছেন অনেকবার। সেই ঝগড়া, কথা কাটাকাটি, ধাক্কা-সংঘর্ষের জেরে দুজনের সম্পর্কটা ছিল সাপে-নেউলের মতো।

সেই শত্রুর সঙ্গে কিভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলবেন নেইমার। ডিফেন্ডার হিসেবে রামোস এমনিতেই ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’। মেজাজ গরম করে প্রায়শই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে অহেতুক কড়া ট্যাকল করে বসেন। খেসারত হিসেবে হলুদকাল্ড, লালকার্ডও পান বারবার। চিরশত্রু বার্সেলোনার মুখোমুখি হলে রামোসের মেজাজ যেন আরও সপ্তমে গিয়ে ঠেকে!

নেইমারও কম নন। মেজাজ হারিয়ে তিনিও অনেক সময়ই বিতর্কিত কাণ্ড করে বসেন। ফলে দুজনে মুখোমুখি হলেই বেধে যেত। এমনকি গত মৌসুমে নেইমার পিএসজির হয়ে খেলার সময়ও বেঁধে যায় রামোসের সঙ্গে। যার জের ধরে দুজনকেই কার্ড দিতে বাধ্য হন রেফারি।

তিক্ত সেই অভিজ্ঞতার কারণেই নেইমার রামোসের সঙ্গে খেলতে রাজি নন। ভালদানোর এই কথাতেই স্পষ্ট, রামোসের কারণেই নেইমার রিয়ালে যাননি। গত মৌসুমে না নিতে পারলেও নেইমারের পিছু ছাড়েনি রিয়াল। বরং প্রানপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ব্রাজিলিয়ান তারকাকে ঘরে তোলার। ওদিকে পিএসজিও এখন বিপদে পড়ে গেছে। বার্সেলোনা থেকে রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে নেইমারকে কিনেছে পিএসজি। কিন্তু নেইমারের সঙ্গে এই চুক্তির ব্যাপারে পিএসজির বিরুদ্ধে দলবদলের আর্থিক ফেয়ার প্লে নীতিভঙ্গের অভিযোগ আছে। সেই অভিযোগ তদন্ত করছে উয়েফা।

গণমাধ্যমের আভাস ইঙ্গিত, উয়েফা শেষ পর্যন্ত নেইমারকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্যই চাপ দিতে যাচ্ছে পিএসজিকে। সত্যি এমন চাপ দেয়, তাহলে পিএসজি বাধ্য হবে নেইমারকে বিক্রি করে দিতে। রিয়ালও তাই আঁটসাঁট বেঁধে মাঠে নামছে। কিন্তু ভালদানোর কথায় স্পষ্ট, নেইমার শর্ত দিয়েছেন তাকে নিতে হলে রামোসকে তাড়াতে হবে।

গত মৌসুমেও ঠিক এক রকম একটা শর্তের কথাই উঠেছিল। নেইমার নাকি রিয়াল কর্তাদের শর্ত দেন, তাকে নিতে হলে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে বিক্রি করতে হবে। তাকেই বানাতে হবে দলের নেতা। এই গুঞ্জনটা সত্য ছিল কিনা, সেটা এখনো জানা যায়নি। তবে মৌসুম শেষে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ঠিকই রিয়াল ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন জুভেন্টাসে। কিন্তু নেইমার পিএসজি ছেড়ে রিয়ালে আসেননি। রামোস থাকলে ভবিষ্যতেও যে যাবেন, সেটা বললেন রিয়ালের মহাব্যবস্থাপকই।

তাহলে? রিয়াল কর্তারা এখন কি করবে? নেইমারের শর্ত মেনে রামোসকে বিক্রি করে দেবে? নেইমারকে কেনাটা যে স্বপ্ন তাদের!

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন