মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সৌদি সিনেমা হলে নামাজের জন্য থাকবে আলাদা যায়গা!

ভোরের সংলাপ ডট কম :
এপ্রিল ২৭, ২০১৮
news-image

দীর্ঘ ৩৫ বছরের বিরতি ভেঙে রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে সিনেমা প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। গেল সপ্তাহে রাজধানী রিয়াদের একটি প্রেক্ষাগৃহে সুপারহিট ছবি ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে দেশটি নতুন এক সাংস্কৃতিক যুগের পথে যাত্রা করে। তবে এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের সঙ্গে সিনেমাকে সাংঘর্ষিক বলেও সমালোচনা করছেন। তাদের এ ধারণা বদলে দিতে এবার বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রেক্ষাগৃহের মালিকপক্ষ। হলিউড রিপোর্টারের এক সংবাদে জানা যাচ্ছে, সিনেমা চলাকালীন প্রার্থনার সময় হলে আগত মুসলিমরা যাতে প্রার্থনা করতে পারেন, সেজন্য প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে আলাদা একটি কক্ষ বানানোর জন্য প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা সম্মত হয়েছেন এবং এ লক্ষ্যে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস আসন্ন রমজান উপলক্ষে এ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব থিয়েটার ওনার্সের প্রেসিডেন্ট জন ফিথিয়ান। একই সঙ্গে তিনি আরো জানিয়েছেন, সম্প্রতি সিনেমা হল চেইন এএমসি থিয়েটার রিয়াদে যে প্রেক্ষাগৃহটি চালু করেছে, সেখানেও প্রার্থনার জন্য আলাদা ঘর তৈরি করা হয়েছে। গেল মঙ্গলবার সিনেমাকনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ফিথিয়ান।

ফিথিয়ান বলেছেন, ‘এটা নিশ্চিত, এখন থেকে নতুন যেসব প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করা হবে, তার প্রতিটিতে অবশ্যই প্রার্থনার জন্য নির্ধারিত কক্ষ তৈরি করা হবে। এএমসির বর্তমান ঠিকানা, যা পারফর্মিং আর্টের জন্য প্রসিদ্ধ, সেখানে আগে থেকেই প্রার্থনালয় আছে।

সিনেমা প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় তিন যুগের বন্ধ্যত্বের অবসান ঘটিয়ে সৌদি আরবে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির দরজা যেভাবে উন্মুক্ত হয়েছে, সেখানে ক্রমেই এ প্রশ্ন বড় আকার হয়ে উঠছে, সিনেমার প্রদর্শকরা কীভাবে দেশটির সংস্কৃতি ও ধর্মীয় চর্চাকে সমন্বয় করবে। এ প্রসঙ্গে ফিথিয়ান বলেন, ‘সমস্যা নিরসনে অসংখ্য উপায় আছে।’ সৌদি সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্যের পাশাপাশি নারী-পুরুষদের জন্য পৃথক প্রেক্ষাগৃহ ও ভিন্ন ভিন্ন শো টাইম নিয়েও আলোচনা হয়। এমনকি প্রেক্ষাগৃহে আসা-যাওয়ার জন্য নারী-পুরুষদের আলাদা সিঁড়ি রাখার বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা হয়। এ নিয়ে ফিথিয়ান বলেন, ‘টিকিট বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির প্রতি কীভাবে শ্রদ্ধাশীল থাকা যায়, আমরা এ বিষয়টি নিয়ে এখানে আলোচনা করেছি।’

অন্যদিকে এএমসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাডাম অ্যারোন বলেছেন, ‘তিন সপ্তাহ আগেও সিনেমার প্রদর্শনী নিয়ে সব চিন্তা সবাইকে এক কাতারে রেখেই করা হয়েছিল।’ এরপর এ পরিকল্পনায় ছেদ ঘটিয়ে ‘সঙ্গীহীন পুরুষ’ অথবা ‘অবিবাহিত’দের এখানে ছবি দেখার অনুমতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘পারিবারিক প্রদর্শনী’ নামেও আলাদা প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করা হয়। যেখানে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, নারীরা ছবি দেখতে আসতে পারবে কিন্তু তাদের অবশ্যই তার স্বামী অথবা রক্তের সম্পর্কের পুরুষ আত্মীয়কে সঙ্গে আনতে হবে।

অবশ্য এত বাধা সত্ত্বেও সৌদি আরবে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসতে থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন অ্যারোন। তিনি বলেন, ‘সঠিক পথে আসার জন্য দেশটির এ প্রচেষ্টায় বারবার পরিবর্তন আসবে।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যদি অনুমান করেও বলি, তাহলে তারা একদিন সবার জন্য উন্মুক্ত প্রেক্ষাগৃহ চালু করবে। এটা কাজের প্রত্যাশার জায়গা থেকেই বলছি। অবশ্য এজন্য সময় নেবে তারা।’

উল্লেখ্য, সৌদি আরবের প্রধান আর্থিক তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল চেইন আমেরিকান মুভি ক্ল্যাসিক বা এএমসির সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে সৌদি আরবের ১৫টি শহরে ৪০টি সিনেমা হল নির্মাণ করবে এএমসি। এর পরের সাত বছরে ২৫টি শহরে ৫০ থেকে ১০০টি সিনেমা হল নির্মাণ করা হবে। সৌদি আরবের নাগরিকরা সর্বশেষ ১৯৭০ সালে সিনেমা দেখেছিলেন। তখন দেশটির কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতাদের চাপে সিনেমা হলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

bhorersanglap