শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ত্রাণ চাই না, বই-খাতা দেন

ভোরের সংলাপ ডট কম :
জুন ১৭, ২০১৭
news-image

প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় এ পর্যন্ত ১৫৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ ১১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ বিপর্যয়ের তিন দিন পর গতকাল শুক্রবার পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছে রঙামাটিতে ১১০, চট্টগ্রামে ২৩, বান্দরবানে ছয়, কক্সবাজারে দুই ও খাগড়াছড়িতে একজন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ঢলে ভেসে গিয়ে, গাছ ও দেয়ালচাপায় এবং বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে আরো ১৪ জনের।

‘পাহাড় ধসে আমার সব বই ঘরের সঙ্গে চলে গেছে। আমার ত্রাণ লাগবে না, আমি ত্রাণ চাই না, বই-খাতা দেন। আমি আবার পড়তে চাই।’ পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরের টেলিভিশন সম্প্রচারকেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বৃষ্টি আক্তার বই পেতে এ আকুতি জানায়। এই আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া লোকদের কাছে পেয়ে বই-খাতা চেয়ে বসে শিশুটি।
বৃষ্টির পরিবারের ঠাঁই হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী শিমুলতলী এলাকায় মঙ্গলবার সকালেও তাদের ঘর ছিল। পাহাড় ধসে সেই ঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বৃষ্টির মা-বাবা কান্না করছেন সর্বস্ব হারিয়ে, আর তার কান্না বইয়ের জন্য।
বৃষ্টি শহরের ভেদভেদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বৃষ্টির মতো রাঙামাটির অনেক শিশুই বই-খাতা হারিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে টেলিভিশন ভবনের আশ্রয়কেন্দ্রে বৃষ্টির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বৃষ্টি বলে, ক্লাসে তার রোল নম্বর ১০। বই-খাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তার খুব খারাপ লাগছে। তার পড়তে ভালো লাগে।
বৃষ্টির মা নাসরিন বেগমও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। বৃষ্টির বাবা দিনমজুর। আশ্রয়কেন্দ্রে বৃষ্টির ছোট বোনও রয়েছে। সে এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি।
নাসরিন আক্তার বলেন, ‘বাড়ি-ঘর থেকে কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে বের হয়ে এসেছি। কিন্তু মেয়ে তো অতশত বোঝে না। বইয়ের জন্য কেবল হা-হুতাশ করছে।’ মঙ্গলবার রাত থেকে এই আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ১০০ মানুষ রয়েছে।
এদিকে, ভূমি ধসে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর পাহাড়ি এলাকা ঘিরে দুর্যোগ মোকাবেলায় মহাপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য এ সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে বৈঠকের বিষয়টি অবহিতও করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এক মাসের মধ্যে পাহাড়ি এলাকা ঘিরে ক্ষয়ক্ষতি ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে প্রতিবেদন তৈরিতে ২১ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।
jamunanews24.com

bhorersanglap