শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকায় চমক দেখাতে চায় বিএনপি!

ভোরের সংলাপ ডট কম :
জুন ১৭, ২০১৭
news-image

আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকার নির্বাচনী আসনগুলোতে চমক দেখাতে চায় বিএনপি। এতে পাল্টে যেতে পারে বিএনপির ঢাকার বেশ কয়েকটি আসনের প্রার্থী তালিকা। বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের যোগ্যতা ও দুর্বলতাকে বিবেচনা করে এসব প্রার্থী বদল হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া অনেক নেতার মৃত্যু ও নিষ্ক্রিয়তার কারণেও জনপ্রিয় নতুন প্রার্থীদের দেখা যাবে আগামী নির্বাচনে। সে জন্য ঢাকা মহানগর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ভেতরে ভেতরে চলছে প্রতিযোগিতা। যে যার অবস্থানে নিজেদের ধরে রাখার জন্য অবতীর্ণ হচ্ছেন নানা কৌশলে।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা জেলার বিশটি আসনের অন্তত দশটি আসনে এ প্রার্থিতা পরিবর্তন করা হবে। দলের এ অবস্থান বুঝতে পেরে এ সব আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে এলাকাভিত্তিক গণসংযোগ এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। এর পাশাপাশি দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে গুলশান অফিস ও নয়াপল্টন অফিসে যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যবহার করছেন ফেইসবুক, টুইটারসহ যোগাযোগের সব মাধ্যম। আর এসব মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ঢাকার ৪৯টি থানাকে ২০টি আসনে ভাগ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে আসন নং ১৭৪ থেকে ১৯৩ পর্যন্ত আসনগুলো ঢাকা জেলার নির্বাচনী এলাকা। এর মধ্যে সম্ভাব্য পরিবর্তনের তালিকায় রয়েছে ঢাকা-৪ (শ্যামপুর), ঢাকা-৮ (মতিঝিল), ঢাকা-৯ (সবুজবাগ), ঢাকা-১০ (ধানমণ্ডি), ঢাকা-১১ (বাড্ডা), ঢাকা-১২ (তেজগাঁও), ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর), ঢাকা-১৫ (মিরপুর), ঢাকা-১৬ (পল্লবী) ও ঢাকা-১৮ (উত্তরা)। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ঢাকা-১ (দোহার ও নবাবগঞ্জ) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুুল মান্নান এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশরাফও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা-২ (কেরাণীগঞ্জ-কামরাঙ্গীচর) চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান এবারো এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন বলে তার অনুসারীরা জানান। তবে কোনো কারণে তাকে দেয়া না হলে কামরাঙ্গীচর থানা বিএনপির সভাপতি মনির হোসেন রয়েছেন এ তালিকায়। ঢাকা-৩ (কেরাণীগঞ্চ) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও তার মেয়ে বিএনপির প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহসম্পাদক অপর্ণা রায়।
ঢাকা-৪ (শ্যামপুর) আসনে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মুন্সীগঞ্জের সাবেক এমপি আবদুল হাই। আগামী নির্বাচনে তিনি আবারো মুন্সীগঞ্জ থেকেই মনোনয়ন পেতে পারেন। এভাবে কাজও করেছেন তিনি। অন্যদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভির আহমেদ রবিন এই এলাকায় সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী করার পাশাপাশি নিজের অবস্থানকেও মজবুত করেছেন। সেই হিসেবে তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।
এদিকে ঢাকা-৫-(ডেমরা-যাত্রাবাড়ী) আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। তা সম্ভব না হলে সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ এ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়ে লড়বেন। ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। কিন্তু মামলা ও অসুস্থতার কারণে তিনি দেশে ফিরতে না পারলে তার ছেলে ইশরাক হোসেন মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা-৭ (লালবাগ) আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক এমপি কারাবন্দি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু। বিগত ওয়ান-ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে আমৃত্যু তিনি জেলে ছিলেন। তার অকাল শূন্যতায় সহধর্মিণী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়ন চাইবেন। এর বাইরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাসেল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা-৮ (মতিঝিল) থেকে বরাবরই অংশ নিয়ে আসছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কারাগারে থাকার কারণে গত নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিবুন্নবী খান সোহেলকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ আসনটি মির্জা আব্বাসের থাকায় আগামী নির্বাচনে তিনি এখান থেকে মনোনয়ন আশা করছেন। ফলে হাবিবুন্নবী খান সোহেল নিজেও আর এতে তেমন আগ্রহী নন। এলাকায়ও যাচ্ছেন না নির্বাচনের পর থেকেই।
ঢাকা-৯ (সবুজবাগ) আসন থেকে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা। এ আসনে আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরীর বিপরীতে ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবি খান সোহেল অথবা শিরীন সুলতানাকেই দেখা যাবে। তবে মির্জা আব্বাস তার সহধর্মিণী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের জন্য মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা-১০ (ধানমণ্ডি) আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক এমপি ও সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুবউদ্দিন আহমদ। তার অবর্তমানে আগামী নির্বাচনে ধানমণ্ডির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে এলাকার জনপ্রিয় নেতা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম কাজ করছেন। অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীমও রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায়। কিন্তু নিজ এলাকার শ্রমিক দল নেতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে পড়ায় এবং মামলার কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে পিছুটান দিতে হতে পারে। মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায় আরো রয়েছেন সাবেক কমিশনার আবদুল লতিফ। এছাড়া এ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদার বড় বোন বিন্দুর প্রার্থিতা নিয়েও গুঞ্জন রয়েছে।
ঢাকা-১১ (বাড্ডা) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুম। ওয়ান-ইলেভেনের পর প্রার্থী সংকটের কারণে তড়িঘড়ি করে তাকে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। আগামী নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা-১২ (তেজগাঁও) আসনে ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা আলহাজ মোসাদ্দেক আলী ফালু। কিন্তু রাজনীতি থেকে তিনি অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকার কারণ আগামীতে এ আসন থেকে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি ও এই এলাকার জনপ্রিয় নিতা সাইফুল ইসলাম নীরব অনেকটা নিশ্চিত। এর অংশ হিসেবে তিনি এলাকায় কাজও শুরু করেছেন। তার বিরুদ্ধে ২১৬টি মামলা রয়েছে। এছাড়া কর্মীবান্ধব হওয়ার কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে তিনি আলাদা ইমেজ তৈরি করে নিয়েছেন।
ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর) আসনে বর্তমান এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মতো জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতার বিপরীতে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এছাড়া এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা এবং স্থানীয় ইজমের কারণে এ আসনে পরিবর্তন আসতে পারে। এক্ষেত্রে বিএনপি চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালামকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দলের পক্ষ থেকে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও ঢাকা-১৫ (মিরপুর) আসনে উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খানের মৃত্যুতে এ আসনটির প্রার্থিতা শূন্য রয়েছে। তবে এ আসনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান একক প্রার্থী হিসেবে সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন। দলের হাইকমান্ডও তাকে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে সব আন্দোলন আর রাজপথে অমানবিক নির্যাতনের শিকার এই নেতা এলাকার সাধারণ মানুষের একটি সহানুভূতি পেয়ে আসছেন।
ঢাকা-১৬ (পল্লবী) আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। আগামী নির্বাচনে স্থানীয় ইজমের কারণে এ প্রার্থিতাও পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসান, কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায়।
এ ছাড়াও ঢাকা-১৮ (উত্তরা) আসনটিতে বিগত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। স্থানীয় ইজমের কারণে এবার আর তিনি এ আসনে দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। অন্যদিকে তিনিও তার নিজ এলাকা খুলনা জেলা থেকে নির্বাচন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির মনোনয়নে চমক দেখা যেতে পারে। সামনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর। নব্বইয়ের তেজগাঁও কলেজের প্রভাবশালী ভিপি, পরে মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী এ নেতার বিরুদ্ধে ১৪৭টি মামলার খড়গ ঝুলছে।
ঢাকা-১৪ (কাফরুল) আসনে এসএ খালেক, ঢাকা ১৯ আসনে ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা ২০ আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুম আতাউর রহমান খানের ছেলে এলডিপি থেকে ফিরে আসা ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খানসহ ওয়ান ইলেভেনে দলের দুঃসময়ে ধামরাই বিএনপির কাণ্ডারি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন রয়েছেন।
মানবকণ্ঠ

bhorersanglap