শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাবার অনেক অনৈতিক কাজের তথ্য ফাঁস করেছে সাফাত

ভোরের সংলাপ ডট কম :
মে ১৪, ২০১৭
news-image

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ভিডিও এবং সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফের মোবাইল ফোনের মুছে ফেলা তথ্য উদ্ধারেই মনোযোগ দিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছে আসামিদের মোবাইল ফোনের কললিস্টসহ বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে আনা অভিযোগ সঠিক বলেই নিশ্চিত হয়েছেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত তার বাবার অনৈতিক অনেক কর্মকা-ের তথ্য দিয়েছে বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সাফাত ও সাদমানকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত থাকা দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত তার বাবার সোনা কারবারি সিন্ডিকেটের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। বাবার অন্দরমহলের অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করেছে তাদের কাছে।

 

 

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন সাফাত ও সাদমান খোলামেলা কথা বলছে তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কোন আসামি ভিডিও করেছিল বা তারা নিজেরা ভিডিও করেছিল কিনা এবং কোনও ভিডিও তরুণীদের মোবাইল ফোনেও আছে কিনা, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, রেইনট্রি হোটেলের ৭০১ নম্বর রুমে ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীর ভিডিও করেছিল ড্রাইভার বিল্লাল। এছাড়া হোটেল রুমের বাইরে তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের সবই ঘটেছে হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে।

 

 

 
জিজ্ঞাসাবাদে তারা তদন্ত কর্মকর্তাদের আরও জানিয়েছে, যে পরিবেশে সাফাত বেড়ে উঠেছে তা কোনও সুস্থ্য ও স্বাভাবিক পরিবেশ নয়। বেশি অর্থের কারণে খুব সইজেই বখে গিয়েছিল তারা। আর সাফাতের পিতা-মাতার বৈরী সম্পর্কও এ অবস্থার জন্য দায়ী বলে মনে করে দুই আসামি। এছাড়া ইয়াবা ও নারী ছিল এদের নিত্যসঙ্গী। এক্ষেত্রে গাড়িচালক বিল্লাল ও বডিগার্ড আজাদের সহায়তা নিতো সাফাত। আপন জুয়েলার্সের করপোরেট অফিসের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাস আগে সাফাতের বডিগার্ড হিসাবে আজাদকে নিয়োগ দেন বাবা দিলদার আহমেদ। বিভিন্ন জায়গায় মাতলামি করে পিটুনির শিকারও হয়েছিল সাফাতকে। তারপর থেকেই তাকে রক্ষার জন্য বডিগার্ড হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় আজাদকে।

 

 

 
গুলশানের আপন ঘরের কেয়ারটেকার মেহেদী বলেন, ‘সাফাতের খারাপ আচরণের পরেও যাতে কেউ কিছু করতে না পারে, সেজন্যই অস্ত্রসহ বডিগার্ড নিয়োগ করা হয়েছিল। বারিধারার করপোরেট অফিসের মাধ্যমে বাছাই করে শুধুমাত্র সাফাতকে দেখভালের জন্যই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বডিগার্ড। সাফাত যেখানে যা করতে চাইতো তার সবই সমন্বয করতো বডিগার্ড আজাদ। এক্ষেত্রে মামলার পলাতক আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম তাদের প্রধান সহযোগী ছিল। নাঈম ও আজাদ ঘটনার রাতের বেশিরভাগ অপকর্মের ভিডিও করেছিল। যদিও পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে তা শেয়ার করা হয়। মামলা হওয়ার পর সেগুলো মুছে ফেলা হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। তাদের মতে, বডিগার্ড আজাদকে গ্রেফতার করতে পারলে আরও অনেক রহস্য জানা যাবে।

 

 

 

 

 
জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হোটেলে ধর্ষণের ঘটনায় সাফাতের নির্দেশই সবাই মেনেছে। হোটেলের মালিক পক্ষ সাফাতের ঘনিষ্ঠ। এজন্য নেশাদ্রব্য সেবন ও ধর্ষণের তথ্য পাওয়ার পরও হোটেলের কর্মচারীরা সেখানে যাওয়ার সাহস পাননি। এর ফলে মারধর করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সব ধরণের কাজেই বাধ্য করতে পেরেছিল আসামিরা। ভবিষ্যতে যাতে এ বিষয়ে কারও কাছে মুখ খোলার সাহস না পায়, সেজন্য সহযোগীদের ক্যামেরায় ভিডিও করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাতেও কাজ না হলে সাফাত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছে বলে স্বীকার করেছে সাফাত ও সাদমান।

 

 

 
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর ইসমত আরা এমি বলেন, সাফাতের ‘বডিগার্ড আজাদ, সঙ্গী নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম ও গাড়ি চালক বিল্লালের খোঁজে আজও বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। তারা ধরা না পড়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

 

 

 
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলীমুজ্জামান বলেন, ‘তদন্ত কাজে আসে এমন ভিডিও তারা এখনও খুঁজে পাননি। গুরুত্বপূর্ণ কোনও তথ্য মোবাইল ফোন থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’

 

 

 

 
এখনও অনেক তথ্য আসামিরা গোপন করছে উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা ইসমত আরা এমি বলেন, ‘আসামিদের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখতে ধর্ষণের শিকার তরুণীদের সামনে আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনাও রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে যা করার, তা করা হবে।’ বাংলা ট্রিবিউন

bhorersanglap

আরও পড়তে পারেন