শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যে কোনো সময় চীন-ভারত যুদ্ধ!

ভোরের সংলাপ ডট কম :
মে ৮, ২০১৭

এম. মোশাররফ হোসাইন, ঢাকা:
অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীন-ভারত সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। বিশ্ব পরিস্থিতির বর্তমান ক্রান্তিকালীন এই সময়ে এশিয়ার দুই বৃহৎ প্রতিবেশি রাষ্ট্র চীন ও ভারত ব্যাপক যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রচারিত হচ্ছে। তারই অংশ হিসাবে দু’দেশ তাদের দীর্ঘ সীমান্তে ব্যাপক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছে। ফলে যে কোনো সময় বেঁধে যেতে পারে পরমাণু ক্ষমতাধর এই দু’দেশের মধ্যে এক ভয়ানক যুদ্ধ। যা গোটা বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক সমর বিশেষজ্ঞরা।
উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে ফের দক্ষিণ তিব্বত আখ্যা দিয়ে সম্প্রতি চীনের সিভিল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ প্রদেশটির ছয়টি অঞ্চলের নতুন নামকরণ করে চীনের একটি সংশোধিত মানচিত্র প্রকাশ করেছে। চীনা ভাষার নামগুলিকে তিব্বতি এবং রোমান বর্ণমালায় লেখার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। যে ছ’টি নতুন চীনানামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল- ও’গিয়াইনলিং, মিলারি, কোইডগারবোরি, মাইন কুকা, বি মোলা ও নামকাপুবরি।
তিব্বতি ধর্মগুরু দালাইলামার অরুণাচল সফর নিয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিল চীন। তাকে বিপজ্জনক ও চক্রান্তকারী আখ্যা দিয়ে দালাইলামাকে অরুণাচলে যেতে দিলে ফল খারাপ হবে বলে চীন ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। চাপের কাছে অবশ্য মাথা নত করেনি ভারত। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই অরুণাচল সফরে যান দালাইলামা। তারপরই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত কড়া বিবৃতি দিয়ে জানায়, চীন-ভারত দ্বিপাক্ষিকসম্পর্কে মারাত্মক ক্ষতি করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের বিরুদ্ধে চীন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও হুমকি দেয়।
চীন সর্বশেষ ভারতের সাথে যুদ্ধে জড়ায় ১৯৬২ সালে তিব্বত নিয়ে, সে যুদ্ধে চীন তিব্বতের উপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। তবে ভারত এখনও তিব্বতের উপর চীনের কর্তৃত্ব মেনে নিতে পারেনি। অন্যদিকে চীন অরুণাচলকে ভারতের অংশ বলে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। চীনের দাবি, অরুণাচল দু’দেশের মধ্যে একটি বিতর্কিত এলাকা।
১৯৬২ সালের যুদ্ধে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের যে এলাকা (আকসাইচীন) দখল করেছিল চীন, সে এলাকা ফেরত দেয়ার দাবি করছে ভারত। কিন্তু চীন তাতেও নারাজ। ফলে জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু করে অরুণাচল পর্যন্ত বিস্তৃত সুদীর্ঘ চীন-ভারত সীমান্তে বহু বছর ধরেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতির পথে কাঁটা হয়ে রয়েছে। অরুণাচলের ছ’টি এলাকায় চীনের নতুন নামকরণ করা নিয়ে ভারত সরকারের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারাও এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনের সাথে প্রতিবেশি দেশগুলোর সাম্প্রতিক ঘটনায় দ্বন্ধে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে ভারত। আর এতে ইন্ধন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ চীন সাগরের পুরোটাই একক মালিকানা দাবি করে চীন। কিন্তু চীনের এই একক মালিকানা নীতির বিরোধিতা করে ভিয়েতনাম, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাইসহ প্রভৃতি রাষ্ট্র। ভারত এই দেশগুলোকে সমর্থন করে। কোন বৃহৎশক্তি চীনের সাথে বিরোধে না জড়ালেও ভারতের সমর্থনে ভিয়েতনাম কিছুটা বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণেভিয়েতনাম চীনের যে কোনো আগ্রাসন মোকাবেলার জন্য ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সামরিক ও অর্থনৈতিক চুক্তি করে, যার ফলে ভারত ভিয়েতনামকে বেশ কিছু অত্যাধুনিক ব্রামোস ক্রুজ মিশাইল ক্ষেপণাস্ত্র দেয়, যা চীনের যে কোনো হামলা প্রতিরোধে সক্ষম। ভিয়েতনাম ভারতের এসব শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র তার দ্বীপগুলোতে গোপনে মোতায়েন করছে, যা চীন ভালভাবে গ্রহণ করেনি।
অন্যদিকে চীন, ভারতের চিরপ্রতিদ্বদ্বীপ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক করিডোর চুক্তি করে। যা‘ চায়না পাকিস্তান ইকনোমিক করিডোর’বা সিপ্যাক নামে পরিচিত। এ চুক্তির ফলে চীন পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর দিয়ে বেলুচিস্তানের গোয়াধর বন্দর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করবে। ভারতের বিরোধিতা উপেক্ষা করে এই করিডোর নির্মাণের কাজ দ্রুতএগিয়ে চলছে। চীন-ভারতের ঘটনাক্রমের মধ্যে অতিসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সাথে একটি সামরিক চুক্তি করে, যেখানে বলা হয় উভয় দেশ পরস্পরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে। এই চুক্তিতে ভারতের আমন্ত্রণে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজনে ভারতের বিমান, নৌ ও সেনা ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহারের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তির পর পরই ভারত চীনের সীমান্তসংলগ্ন অরুণাচল প্রদেশে শক্তিশালী ব্রামোস ক্রুজ মিসাইল মোতায়েন করেছে। এরপর চীন সীমান্তে শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ সামরিক মহড়া। চীন-ভারতের এই যুদ্ধযুদ্ধ খেলার মধ্যে সর্বশেষ উত্তেজনা বাড়াতে আগুনে ঘি ঢালার কাজ হয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায়।

bhorersanglap